ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

গাছ আছে ফল নেই, টেকনাফে তরমুজ চাষে লোকসানে দিশেহারা কৃষক

আমান উল্লাহ কবির, টেকনাফ প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৩

গাছ আছে ফল নেই, টেকনাফে তরমুজ চাষে লোকসানে দিশেহারা কৃষক
বীজ থেকে গাছ হলেও ধরছে না তরমুজ। অসাধু বীজ ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে লোকসানে পড়েছে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া গ্রামের এক যুবক।

তরমুজ ক্ষেত করতে গিয়ে নিম্নমানের বীজ হওয়ায় দুই লক্ষাধিক টাকার লোকসানে পড়েছে গরীব কৃষক জাহিদ হোসেন (২৭)। এমন লোকসানে সে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

স্বর্নালংকার ও টমটম (অটোরিকশা) গাড়ি বিক্রি করে তরমুজ ক্ষেতে পুঁজি কাটিয়েছিলেন তিনি।

খবর পেয়ে বুধবার  (৮ ফেব্রুয়ারি) টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া গ্রামের তরমুজ ক্ষেতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দুই একরের বেশি জমিতে বিশাল তরমুজের ক্ষেত। চারদিক তরমুজ গাছের সবুজে হাতছানি। গাছে গাছে হলুূদ বর্ণের প্রচুর ফুল। কিন্তু ফল নেই। ধরলেও দুই-একদিন বয়সেই কালো রং ধারন করে ঝরে যায়। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ সব প্রকার ঔষধ ব্যবহার করেছেন। কোন উপকারে আসেনি।

কৃষক জাহিদ হোসেন জানান, বিজ নেয়ার সময় কথা ছিল ভাল ফলন আসবে। এখন আড়াই মাসের বেশি দিন পার হয়েছে। প্রচুর ফুল আসে ও ফলও দেয়। কিন্তু দুয়েকদিন পর পঁচে ঝরে যায়। লাল তীর কোম্পানির ওশান সুগার বীজ বপন করছিলেন তিনি।

টেকনাফ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের পরামর্শে ওই বীজ বপন করা হয়েছিল। চারা গাছের শুরু থেকে ওই কর্মকর্তার দিকনির্দেশনায় এই বীজের তরমুজ চাষ করা হয়। সঠিক সময়ে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফলন না আসায় এখন জমি থেকে গাছ তুলে ফেলে শষা চাষ করবেন বলে ভাবছেন ওই কৃষক। নিম্নমানের বীজ হওয়ায় এদশা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে, কৃষক জাহিদ হোসেন নিজের টমটম (অটোরিকশা) ও স্ত্রীর স্বর্ণালংকার বিক্রি করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ২ একর জমি বর্গা নিয়ে তরমুজ ক্ষেত করেছিলেন। ফলন না আসায় সে এখন রাস্তার ফকির হয়েছে। এ দুর্দশার জন্য তিনি কৃষি কর্মকর্তাকে দুষছেন। কারন সে যে বীজ বপন করতে চাইছিলেন কৃষি কর্মকর্তা সেই বীজ না করে দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, অন্যান্যবার ভিন্ন কোম্পানির বীজ লাগালেও এবছর লাল তীর কোম্পানির ওশান সুগার বীজ বপন করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান,  ফল পঁচে গিয়ে ঝরে যাওয়ার কারণ জমিতে অতিরিক্ত বল, নিম্ম মান ও অপরিপক্ক বীজের জন্য এ সমস্যা হতে পারে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন ভিটামিন ঔষধ ছিটানো হয়েছে। জৈব সার, ইয়েলো কার্ডসহ বিভিন্ন রকমের সহযোগিতা করেছি। আগামী মৌসুমে প্রদর্শনী থাকলে যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

অপর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিউল আলম কুতুবী জানান, এবছর পুরো টেকনাফ ১'শত ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।  এখানে শুধু হ্নীলা ইউনিয়নে ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। চাহিদার চেয়ে কম তরমুজ চাষ হয়েছে। কোথাও কোথাও ভাল ফলন হলেও বেশির ভাগ এলাকায় মধ্যম ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের সাথে নিয়মিতভাবে তদারকি ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।