রাজধানীতে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের এ তীব্রতা। সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। কুয়াশার দাপটও চোখে পড়ার মতো। আর শীত বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এবারের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গৃহহীন, ছিন্নমূল ও কর্মজীবীদের। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতে শিশুদের ঝুঁকিটাও বেশি।
শীতের কারণে শীতজনিত রোগী বাড়ছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ফুটপাতের ছিন্নমূল ও বস্তিতে বসবাসকারী নিম্নবিত্তদের অবস্থাও করুণ হয়ে পড়েছে। হঠাৎ নেমে আসা ঠাণ্ডায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেন অনেকে। অন্যদিকে বেড়ে গেছে শীতের কাপড় কেনার পরিমাণও। গরম কাপড়ের বাজার বেশ জমে উঠেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘন কুয়াশার কারণে দেখা মেলেনি রোদের, তাই দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে তীব্র হয়েছে শীত। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গা আর ঢাকায় ছিল ১২ ডিগ্রি।
আবহাওয়া অফিস যা বলছে
ঘন কুয়াশার কারণে দেখা মেলেনি রোদের, তাই দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে তীব্র হয়েছে শীত। সেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশা ও মেঘের আড়াল থেকে হেসে উঠছে সূর্য। বাড়তে শুরু করেছে দিনের তাপমাত্রা, কমছে শীতের তীব্র অনুভূতি।
এখন ধীরে ধীরে মেঘ কেটে যেতে থাকবে। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস তুলে ধরে তিনি জানান, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগী
রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করা বেশি। এসব রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বেশি। চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েক দিনের শীতের কারণে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
শীতে নিম্নবিত্তদের অবস্থা
ঠাণ্ডায় নগরীতে নিম্নবৃত্ত ও ছিন্নমূল মানুষকে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। শীতে জবুথবু অসহায় প্রাণীরাও। সেগুনবাগিচা এলাকায় একটি গ্যারেজের সামনে আগুন পোহাতে দেখা যায় চার জনকে। এদের দুজন নিরাপত্তা প্রহরী বাকিরা গ্যারেজে কর্মরত। তারা বলেন, হঠাৎ নেমে আসা ঠাণ্ডায় আগুন না জ্বালিয়ে উপায় ছিল না। এখনই আমরা শীত সইতে পারতেছি না। সামনেতো পৌষ মাস আসছে, তখন কি হবে বুঝতেছি না।
আগুন পোহাতে আসেন রিকশাচালক নাজমুল আলী। তিনি বলেন, রিকশা নিয়ে বের হলে হাত-পা জমে যাচ্ছে। বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারি না, পকেটেও টাকা নেই। আগুন জ্বালানো দেখে এলাম।
গরম কাপড়ের ব্যবসা রমরমা
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের সামনে, মতিঝিল শাপলা চত্বর, পল্টন, গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম শীতের গরম কাপড় কেনার হিরিক পড়ে যায়। এ সুযোগে দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন হকাররা। হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়াই এখন অনেকেই গরম কাপড় কিনছেন। একসঙ্গে সবাই আশায় কাপড়ের সংকট রয়েছে। তাই দাম একটু বেশি এমনটাই বলছেন বিক্রেতা আরিফ।