ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, অক্টোবর ১৯, ২০২৪ |

EN

গাজীপুরের টুনটুনি ভাঙতে পারে রানীর রেকর্ড!

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, অক্টোবর ১২, ২০২১

গাজীপুরের টুনটুনি ভাঙতে পারে রানীর রেকর্ড!

বিস্ময়কর ছোট এক বাছুর গরুর জন্ম হয়েছে। দেশি জাতের এ গরুটির বয়স বছর পার হলেও খর্বাকৃতিই (বামন) রয়ে গেছে। সম্প্রতি গড়া গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে সাভারের রানী ছোট গরুর স্বীকৃতির রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে টুনটুনি নামের এই গরুটি।

এমন একটি ছোট্ট (খর্বাকৃতি) গরুর সন্ধান পাওয়া গেছে উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের হায়াতখার চালা আড়ালিয়া ভিটা গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত আহাম্মদ আলীর ছেলে কৃষক আবুল কাশেমের পালিত একটি গাভীর গর্ভে কাজলা সাদা রঙের খর্বাকৃতির বাছুরের জন্ম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বকনা বাছুরটির জন্ম হয়। বছর ঘুরে গেলেও গরুটির ওজন উচ্চতা সে হারে বাড়েনি।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরের গরুটি মায়ের পাশ কাটিয়ে ওপাশে টুনটুনির দুরন্তপনা চলে হরদম। মা আদর করতে চাইলে দৌড়ে দুরে সরে দুষ্ট টুনটুনি। মা মুখ নাড়তেই ফের মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়ায় সে। এমনি খুনসুটিতে সকাল গড়িয়ে বিকাল পর্যন্ত মায়ের চারপাশে ঘোরাফেরায় মত্ত থাকে এক বছর বয়সের গরুর বাছুর টুনটুনি। এখন সে পরিবারসহ গ্রামের বহু মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পরিবারের দাবি এটিই হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু। যার ওজন ২১ থেকে ২২ কেজি হবে বলে জানান গরুর মালিক। টুনটুনি পাখির মতো দারুণ তিড়িংবিড়িং করে বলে সে বকনা বাছুরের নাম রাখা হয়েছে টুনটুনি। তাই টুনটুনি নামের খর্বাকৃতির বকনা গরুটিই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু এমনটি স্থানীয়রাও দাবি করেন।

 

গরুর মালিক কৃষক আবুল ক্ষেম জানান, তার ছোট বড় সাতটি গরু রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি গাভী গরু রয়েছে আর চারটি ষাঁড়। গাভী তিনটির মধ্যে একটি গাভী বেশ বয়স্ক হয়ে পড়েছে। সে গাভীটি আটটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। গত বছর সে গাভীটি হিটে (গর্ভ ধারণের সময়) আসলে ষাঁড়ের মাধ্যমে বীজ দেওয়া হয়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে গাভীটি খুবই ছোট আকারের একটি বাচ্চা প্রসব করে। যা দেখতে খুবই ছোট হয়েছে। জন্মের সময় বাছুরের লিঙ্গ নির্ণয় করা যায়নি। কয়েকদিন পর সেটি একটি বকনা (মাদি) বাছুর তা চোখে পড়ে।

 

প্রতিবেশী কামাল হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে টিভিতে দেখেছি সাভারের রানী নামের ছোট্ট গরুটি। এখন তার চেয়ে ছোট্ট গরু বাড়ির পাশেই। আমরা কখনো এমন ছোট গরু দেখিনি। খুবই চঞ্চল ছোট বাছুরটি। দেখতেও দারুণ আনন্দ লাগে। সারা দিন মায়ের পাশে পাশে ঘুরে বেড়ায়। আশা করি এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর স্বীকৃতি পাবে।

 

কৃষকের স্ত্রী জরিনা বেগম জানান, আমরা কৃষক পরিবার। নিয়মিত আমরা গরু লালন পালন করি। সব সময় আমাদের গোয়ালে / টি গরু থাকে। গাভীটির গর্ভে গত বছর অদ্ভুত এক বহন বাছুর (বকনা) জন্ম নিছে। বাছুর এতো ছোট ছিল যে গাভীর ওলানে মুখ লাগাতে পারতো না। পরে কোনো উপায়ন্তর না দেখে তাড়াতাড়ি করে বোতলে দুধ ভরে বান দিয়ে খাওয়ানো হতো বাছুরকে। পরে কুলে তুলে উঁচু করে গাভীর ওলানে ধরলে সে নিজে নিজেই দুধ খেতে পারতো। সকাল দুপুর রাত করে দুধ খাওয়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে এক বছর বয়স হলো বাছুরটির। কিন্তু গায়ে গতরে বড় হচ্ছে না।

 

তিনি বলেন, এখন বাছুরকে সন্তানের মত আদর করি। অন্য রকম আনন্দ লাগে। গ্রামের মানুষ দেখতে আসে ছবি তুলে দেখতে ভালো লাগে। যদি এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু হয় তাহলে আমাদের গর্ব আমাদের গ্রামের গর্ব দেশের গর্ব।

 

গোসিঙ্গা ইউনিয়নের নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (ইউপি সদস্য) আশরাফুজ্জামান বাবু জানান, এটা আমাদের আনন্দের খবর। বকনা বাছুরটি যদি বিশ্বের সব চেয়ে ছোট গরু হয় তাহলে গ্রামবাসীর আনন্দ আরও বেড়ে যাবে। আশা করি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যাচাই বাছাই করে স্বীকৃতির ব্যবস্থা নিবেন।

 

খর্বাকৃতির গরু টুনটুনির শারীরিক বর্ণনায় দেখা গেছে এর গড় উচ্চতা ২০ থেকে ২২ ইঞ্চি। ওজন ২২ থেকে ২৩ কেজি। লম্বায় মাথা থেকে পেছনের পাশ পর্যন্ত ৩২ ইঞ্চি পাওয়া গেছে।

 

শ্রীপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রোকনুজ্জামান পলাশ জানান, এমন খবর আমাদের জানা নেই,শুনলাম। দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। যদি সবচেয়ে ছোট গরু হয় এটি তাহলে আমরা যাচাই বাছাই করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করবো। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, এমনটি হলে দ্রুত লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। বিস্ময়কর গরুটি দেখতে যাবো।