খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন,খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা।
গত দুবছর বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে তেমন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করতে না পারলেও,এবার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের আদীবাসী পাড়ায় বড়দিনের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করছেন তারা।
জানা গেছে,উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে মোট ৫৮টি গির্জা (খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের উপাসনা লয়) রয়েছে। উপজেলা ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায়,বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে প্রতিটি গির্জায় সরকারীভাবে ৫শ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার আদাীবাসী পাড়া ঘুরে দেখা গেছে,বড়দিন উপলক্ষে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী নারীরা তাদের বাড়ীর সৈান্দয্য ফুটিয়ে তুলতে মাটির দেয়ালে নানা রকমের ফুল এবং নকশা আকছেন।
এদিকে নানা রকমের ফুল,বেলুন,নকশা করা কাগজ ও জরি দিয়ে কয়েক দিন ধরেই সাজাচ্ছেন তাদের গির্জা। উপজেলার সবগুলো গির্জায়-গির্জায় বর্ণিল সাজে কয়েক দিন ধরেই চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। তাদের বিশ্বাস,যিশুর জন্ম হয়েছিল গোয়ালঘরে।সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলোতে তৈরি করা হয়েছে প্রতীকী গোয়ালঘর। অনেকে তাদের বাড়িতেও তৈরি করেছেন গোয়ালঘর।
বেতদিঘি ইউনিয়নের সুর্য্য পাড়া গ্রামে দেখা মেলে বেলী বাস্কে,কুস্কু মার্ডি,লিমা মার্ডি তাদের বাড়ী সাজানোর কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন,এসময় তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান,এটি তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব,২৫ ডিসেম্বর এইদিনে আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তারা দিনটি উদযাপন করেন।দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে,থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন।
সেইসাথে প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া, সংগীতানুষ্ঠান ও নৃত্য পরিবেশন,বড়দিনের কার্ড বিনিময়,গির্জায় ধর্মোপাসনা এবং বড়দিনের বৃক্ষ,আলোকসজ্জা,যিশুর জন্মদৃশ্য এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে তারা সাজ-সজ্জা করছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের পারইল কদবীর ক্যাথলিক চার্চের ইনচার্জ ফাদার জসিম ফিলিপ মুর্মু ও সিস্টার প্রীতি গোমেজ বলেন,খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট ২৫শে ডিসেম্বর ওইদিনে বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন।তাদের বিশ্বাস,সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন। তারা বলেন,সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার লক্ষে যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন। ৪৪০ সালে পোপ এইদিবসকে স্বীকৃতি দিলেও উৎসবটি জনপ্রিয়তা পায় মধ্যযুগে। সে সময় এর নাম দেওয়া হয় ‘ক্রিসমাস ডে’।
দিবসটি উপলক্ষে গির্জায় নানা আয়োজন করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকে প্রার্থনা শুরু করা হবে,পরের দিন ২৫ ডিসেম্বর সারাদিন বিশেষ প্রার্থনা সহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন শেষ হবে। এই দিনে তারা মানুষের শান্তি,কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থনা করে যিশুকে স্মরণ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে উপজেলার ৫৮টি গির্জায়,সরকারীভাবে ২৯হাজার মেট্রিকটন চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং তারা যাতে শান্তি সুশৃঙ্খল ভাবে দিবসটি উদযাপন করতে পারে,সেদিক খেয়াল রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।