ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বলাৎকারের ঘটনায় অভিযুক্ত আজাদ মোল্যা (৩৭) কে বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি মহল। উপজেলার ময়না ইউনিয়নের চরবর্নী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি (এমএলএস) হিসেবে আজাদ মোল্যা কর্মরত। তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানোয়ার করিমের আপন ভাগ্নে।
আজাদ মোল্যা বলাৎকারের ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ার পরও তার চাকরি যাতে চলে না যায় সেজন্য উঠেপড়ে লেগেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামা সানোয়ার করিম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু আহাদ মিয়া এবং বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও মধুবর্নি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনিচুজ্জামান।
গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু আহাদ মিয়া নিজেই আজাদ মোল্যাকে বরখাস্তের নির্দেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের বলেছিলেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। সেদিন তিনি আরো বলেছিলেন, চরবর্নী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানোয়ার করিমকে অফিসে ডেকে বলাৎকারের অভিযোগে স্কুলের দপ্তরিকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ সময় তিনি বলেন, দপ্তরি পদে আজাদকে নিয়োগ দিয়েছে ম্যানেজিং কমিটি। তাই ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে তাকে বরখাস্ত করতে প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছে।
কিন্তু দুইদিন পরেই বোল পাল্টে ফেলেন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু আহাদ মিয়া। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি ফোনে এই প্রতিনিধিকে বলেন, ম্যানেজিং কমিটি কি সিদ্ধান্ত নেবে, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ওই দপ্তরির বেতন স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে নির্দেশনা অনুযায়ী ২১ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকেছিলেন চরবর্নী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানোয়ার করিম। কিন্তু সভা কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।
এর আগে প্রধান শিক্ষক বলেছিলেন, ২১ ডিসেম্বরের সভায় থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে (টিইও) আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনিসহ ম্যানেজিং কমিটি মিলে দপ্তরিকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কিন্তু ২১ ডিসেম্বর দুপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু আহাদ মিয়া এই প্রতিনিধিকে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভায় আমি যাব কেন?
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানোয়ার করিম বলেন, দপ্তরি আজাদ মোল্যা পূর্বানুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাকে শোকজ করার বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দপ্তরি কর্তৃক বলাৎকারের যে কথা শোনা যাচ্ছে সে বিষয়ে কারো কোন অভিযোগ নাই। তাই অভিযোগবিহীন কোন বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত ম্যানেজিং কমিটি নিতে পারে না। তবে দপ্তরি আজাদ মোল্যা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে চরবর্নী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আনিচুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ২১ ডিসেম্বর ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ছিল, কিন্তু কারো কোন অভিযোগ না থাকায় কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উড়ো উড়ো শুনেছি যে আজাদ মোল্যা বলাৎকার করেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ডিসেম্বর সকালে চরবর্নী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি আজাদ মোল্যা চরবর্নী গ্রামের ১৮ বছরের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী যুবককে বলাৎকার করে বলে অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগী ঘটনার সময় আজাদের পুরুষাঙ্গ কামড়ে ছিঁড়ে ফেলে। পরে আহত অবস্থায় আজাদকে প্রথমে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। তিনি বর্তমানে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।