ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

গাজীপুরে উন্নয়নের জোয়ার, বাড়ছে নাগরিক সুবিধা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শনিবার, অক্টোবর ৯, ২০২১

গাজীপুরে উন্নয়নের জোয়ার, বাড়ছে নাগরিক সুবিধা
ঢাকার নিকটবর্তী শিল্প অধ্যুষিত জেলা গাজীপুর। সরকারের সুদূরপ্রসারী টেকসই ও মেগা বিভিন্ন প্রকল্পের চলমান কার্যক্রমে দিন বদলের পালায় বদলে গেছে দেশের অন্যতম এ জেলা। বিশেষ জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া গাজীপুরের দুটি পৌরসভা বিলুপ্ত করে ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে দেশের বৃহৎ আয়তনের জনবহুল গাজীপুর সিটি করপোরেশন। একদিকে নগরের অলিগলিতে নগর ভবনের মাস্টারপ্ল্যানে চলমান উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ, অন্যদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার রোল মডেল সৃষ্টির লক্ষ্যে চলমান বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে পিছিয়ে নেই গাজীপুর স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চার লেন মহাসড়ক : সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও মিয়ানমার নিয়ে গঠিত সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল  ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ফোরাম। এ আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের আওতায় ২১টি উপ-আঞ্চলিক সড়ক করিডর উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাসেক ফোরামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় মহাসড়কটি ধীরগতির যানবাহনের পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৯টি উড়াল সড়ক, ৫০টি সেতু, ৭৬টি কালভার্ট, ১১টি আন্ডারপাস, ৩০টি যাত্রীছাউনি, সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ও পথচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সড়কের উভয় পাশে ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ড্রেনসহ ফুটপাথ নির্মাণ করা হচ্ছে।

জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা-বাইপাস) চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প : প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কর্তৃক ২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নীতিগতভাবে অনুমোদন প্রাপ্ত হয়। ২০১৬ সালের মার্চে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ৬৭৩ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি গাজীপুরের ভোগড়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ভুলতায় সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।

বিআরটি প্রকল্প : গাজীপুর থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় দেশের প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প শুরু হয় ২০১২ সালে। দুই দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুনে শেষ করার কথা রয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির (ডিইএফ) অর্থায়ন করছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৩ ভাগ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা-গাজীপুরের সাড়ে ২০ কিলোমিটার পথে যাতায়াত করা যাবে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টায়। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াত অনেক স্বাচ্ছন্দ্যের হবে। গণপরিবহনে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়ক : গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। মহাসড়কটি চওড়া হয় প্রায় ৬৩ ফুট। ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়কটির নির্মাণকাজ শেষে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। যোগাযোগব্যবস্থার এমন সুবিধা পেয়ে সড়কটির দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

সালনা-টোক মহাসড়ক : গাজীপুর সড়ক বিভাগের অধীন আঞ্চলিক মহাসড়ক সালনা-রাজেন্দ্রপুর-কাপাসিয়া-টোক সড়কটি ২৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হয়েছে। ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটির কাজ ২০১৮ সালের মে থেকে শুরু হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে সড়কটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

টঙ্গী-কামারপাড়া সড়ক : টঙ্গী থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন বিশিষ্ট বিশ্ব ইজতেমা মহাসড়ক নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। তুরাগ নদের ওপর দিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন কামারপাড়া সেতুও নির্মাণ করা হয়েছে। এ সড়কটি টঙ্গী থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহার হবে। বিআরটি সড়কের টঙ্গী অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি হ্রাস পেয়েছে।

এলজিইডির নানামুখী উন্নয়ন : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) গাজীপুর সূত্রে জানা গেছে, জেলার শ্রীপুর-রাজাবাড়ি সড়কের কার্পেটিং কাজ চলমান রয়েছে। ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৮ ফুট প্রশস্ত (সোল্ডারসহ ২৪ ফুট) সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ১৩ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ শ্রীপুর-বরমী সড়কের নির্মাণ কাজও সমাপ্ত হয়েছে। ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৮৪ মিটার দীর্ঘ বরমী-সিংহশ্রী ব্রিজ চার বছর আগে শেষ হয়। এই ব্রিজটি নির্মাণের ফলে কিশোরগঞ্জের মানুষ কাপাসিয়া হয়ে গাজীপুর হয়ে ঢাকা যেতে পারছে। সড়কের পাশে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। ১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বড়ইবাড়ী-মির্জাপুর সড়কের কাজও শেষ হয়েছে। এলজিইডি গাজীপুরের বিভিন্ন রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট, হাটবাজার, খাল ও পুকুর খনন, প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছে।

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি : বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতাধীন বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি দেশের প্রথম হাইটেক পার্ক এবং সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক একটি প্রকল্প। পার্কটি ৩৫৫ একর জমির ওপর বাস্তবায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ২টি ডেভেলপারের পাশাপাশি ৬৩টি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জমি/স্পেস বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের শিল্প স্থাপনের কার্যক্রম সম্পন্ন করে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে এবং অন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের শিল্প স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে। পার্কটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হলে প্রায় ৪১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

ঢাকা-টঙ্গী রেলপথ তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডবল লাইন নির্মাণ : বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী রেলপথ তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১২ সালের নভেম্বরে। ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১০৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের অক্টোবরে তা অনুমোদন করে একনেক। এর মধ্যে ভারতের ঋণ রয়েছে ৯০২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর সরকারি তহবিল ২০৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের উন্নয়ন : শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ১০তলা একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ডাক্তারদের ডরমেটরি, ছাত্রীনিবাস নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৭ কোটি ৭২ হাজার ৯৫০ টাকা। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মডেল মসজিদ, শিল্পকলা একাডেমি, নার্সিং কলেজ, ফায়ার স্টেশন, টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে।