মরক্কো বংশোদ্ভূত নৃত্যশিল্পী নোরা ফাতেহি, যিনি এবারে বিশ্বকাপ ফুটবলে ফুটবলারদের পাশাপাশি বড় আকর্ষণ হয়ে আছেন।
কাতার বিশ্বকাপে থিম সং আর ফিফা ফ্যান ফেস্টিভাল মাতিয়ে নিজেকে ইতিহাসের অংশ বলে মনে করছেন এই বলিউড তারকা।
সেইসঙ্গে জানিয়েছেন এক ইচ্ছের কথা; তা হল ফুটবলার ক্রিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে একবার নাচের ছন্দে পা মেলানো।
কাতার বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ম্যাচে নোরা না থাকলেও দোহার আল বিদ্যা পার্কে সদ্য অনুষ্ঠিত ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যালে নোরার নাচে তুমুল ঝড় ওঠে।
কাতার থেকে মুম্বাইয়ে ফিরে এক সংবাদ মাধ্যমে বিশ্বকাপের অফিসিয়াল তৃতীয় সাউন্ডট্র্যাক ‘লাইট ইন দ্য স্কাই’ করার অভিজ্ঞতা এবং ফিফা ফ্যান ফেস্টিভালের পারফরমেন্সের মাধ্যমে বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবনার কথা তুলে ধরেন এখন কানাডার নাগরিক নোরা। টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে সেই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরেছে।
প্রশ্ন: ফিফার এই আয়োজনে আপনার প্রস্তুতি সম্পর্কে বলুন এবং আপনার পারফরম্যান্স আপনি কোন চোখে দেখছেন?
নোরা ফাতেহি: প্রস্তুতি মানে রিহার্সাল করতে আমি দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছিলাম।ভারত থেকে নাচের জন্য আমার ২০ জন সহশিল্পী কাতারে উড়ে এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে মহড়ায় সময় গেছে। পারফর্মেন্সের পোশাক ঠিকঠাক করা, ভিজ্যুয়াল ও এলআইডি গ্রাফিক্স-সেসসব ঠিকঠাক করা হয়েছে ওই সময়ে। আমি মনে করি, কাতারে আমার লাইভ পারফরমেন্স ক্যারিয়ারে ‘ব্রেকিং’ হয়ে এসেছে। ফিফার মতো আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা থেকে অনুষ্ঠান করার জন্য মনোনীত হওয়া নিঃসন্দেহে সম্মানের বিষয়। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, অনুষ্ঠানের আগে আমি খুব নার্ভাস ছিলাম, হাত-পা কাঁপছিলও। কিন্তু শেষপর্যন্ত উৎরে গেছি। আমি কৃতজ্ঞ সবার কাছে।
প্রশ্ন: টেনশন কাটালেন কীভাবে? মনকে শান্ত রাখতে কী করেছিলেন?
নোরা ফাতেহি: মনের শক্তি কাজ করেছে। দায়িত্ববোধ অনুভব করেছি। আমি ভারত ও মরক্কোকে প্রতিনিধিত্ব করি। যে মুহূর্তে মঞ্চে পা রাখলাম, আগের আমি বদলে গেলাম। তখন কিছু আর আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি জানতাম এখানে আমার সেরাটা আমাকে দিতে হবে। এক ঘণ্টা ধরে বিশাল দর্শককূলের মনোযোগ আমাকে ধরে রাখতে হয়েছিল। ‘দিলবার, ‘ও সাকি সাকি’, ‘কুসু কুসু’, ‘ডান্স মেরি রানি’র মতো জনপ্রিয় নাচগুলো নেচেছি। দর্শকেরা খুশি হলেন। তারাও নেচে গেয়ে সঙ্গত করেন। ওই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে সৌন্দর্য হল বৈচিত্র। দক্ষিণ এলিয়ান, আরব ও আমার মরক্কোর ভক্তদের সংমিশ্রণ। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, একতা, যার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার নয়। আমার জন্য ওই পারফরমেন্স অবিস্মরণীয়।
প্রশ্ন: বিশ্বকে গ্রাস করেছে ফুটবল উন্মাদনা, স্টেডিয়ামে বসে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে কেমন লাগলো?
নোরা ফাতেহি: বিশ্বকাপে ম্যাচ ও আবেগ ও উত্তজেনার মিশেল। ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো আমাকে ভিআইপি লাউঞ্জে বসে ম্যাচ দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি পর্তুগাল ও উরুগুয়ের খেলা দেখেছি। রোনালদোর অ্যাকশন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তারকা খোলোয়াড়দের আমরা কেবল টিভিতেই দেখি। এছাড়া এত বড় স্টেডিয়ামে বসে সরাসরি কোনো ম্যাচও আগে দেখিনি। সেই অভিজ্ঞতা এবার হয়েছে আমার।
খেলার হাফ টাইমে আমার কণ্ঠ দেওয়া থিম সং ‘লাইট দ্য স্কাই’ বাজানো হল, শুনে পাগল হয়ে গেলাম। এই গানটিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে, আমি এগিয়েছি অনেকটাই এবং কিছু একটা নির্মাণ ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছি। ফুটবল বিশ্বকাপের মতো আসরে ভারতকে তুলে ধরা আমার লক্ষ্য ছিল। সেটা করা গেছে।
এছাড়া আমার আরও মনে হয়, ফুটবলকে ঘিরে বিশ্বের বহু মানুষ একত্রিত হয়। সবার আনন্দ উদযাপন বিষয়গুলো খুবই ইতিবাচক। যে যার পছন্দের দেশের পতাকা হাতে নেয়, একে অপরের ভাষা, সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা করে, খাবার চেখে দেখে। ভিন্ন ভাষার সংগীতে গলা মেলায়, নাচে, একে অন্যের আনন্দকে সমর্থন করে, সে এক মহা সম্মিলন বলতে পারে। আর এই মহাযজ্ঞের অংশ হতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত।
প্রশ্ন: আপনি কোন দলের সমর্থক?
নোরা ফাতেহি: যদিও জন্মসূত্রে আমি কানাডিয়ান, কিন্তু পৈত্রিক সূত্রে মরক্কান। তাই মরক্কো আমার মনে মাঝে বিরাজমান। এবারে দারুণ খেলেছে কিন্তু দলটি। আশা রাখছি, এই সাফল্য তারা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখবে।
প্রশ্ন: যদি সুযোগ পান তাহলে কোন ফুটবলারের সঙ্গে নাচতে চান? এছাড়া ফিফা আয়োজিত এ যাবৎকালের কোন নাচের পারফর্মেন্সটি আপনার প্রিয়?
নোরা ফাতেহি: ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর কথাই বলতে হয়, তার সঙ্গে একবার নাচতে পারলে মজা হতো। যখন তার খেলা দেখেছিলাম, তার পায়ের কাজ আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। যে দক্ষতায় তিনি খেলেছিলেন, মনে হয়েছিল তিনি একজন দুর্দান্ত নৃত্যশিল্পীও হতে পারেন। এমনকি এও মনে হয়েছিল তিনি ‘অ্যাফ্রো’ নাচের কিছু মুদ্রাও তুলতে পারেন, কারণ এ ধরনের নাচে পায়ের কাজ জানতে হয়। যেটা রোনালদোর আছে। আর আমার মনে হয় শাকিরার নাচটিও মনে রাখার মতো।