ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

খেজুর রস, লক্ষ্মীপুরের 'লক্ষ্মী' রুপের অলংকার

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২২

খেজুর রস, লক্ষ্মীপুরের 'লক্ষ্মী' রুপের অলংকার
সয়াল্যান্ড খ্যাত লক্ষ্মীপুর- শীত এলেই ধারণ করে মোহনীয় এক রুপ। আর এই রুপের শোভাবর্ধনে অলংকারের ভূমিকা পালন করে স্থানীয় খেজুর রস।খেজুর রস সংগ্রহ এবং নানান ধরনের পিঠা সৃষ্টি করে ভিন্ন এক পরিবেশ। প্রকৃতিতে অগ্রহায়ণ আসতেই লক্ষ্মীপুরে শুরু হয় খেজুর রসের মৌসুম। জেলার রামগতি-আলেকজান্ডার, হাসনাবাদ, চররমনীমোহন, রসূলগঞ্জ, চরমোহনা, হায়দরগঞ্জে সাত সকালে বসে ছোট-বড় রসের মেলা। 

হেমন্তের শেষে শীতের আগমনের সাথে সাথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের গাছিরা। গ্রামের মেঠোপথের পাশে ডোবা ও পুকুর পাড়ে সারি সারি অপরিচ্ছিন্ন খেজুর গাছ গুলোর পুরানো ডাল পালা কেটে পরিষ্কারের কাজ অনেক আগেই হয়েছে সম্পন্ন। প্রাথমিক কাজ শেষ করে এখন চলছে রস সংগ্রহের কাজ।

এখানকার গ্রামীণ মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে শীতকাল যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমন গুরুত্ব বহন করে এখানকার খেজুর রসও। শীত যেন গ্রাম অঞ্চলের গাছিদের জন্য নিয়ে আসে রুটিরুজির খোরাক। নানা স্বপ্ন আর প্রত্যাশায় তাদের অনেকটা সময় কেটে যায় এই খেজুর গাছের সাথে। এমনই একজন স্বপ্নবাজ গাছি রায়পুরের কেরোয়া গ্রামের কবির হোসেন। সাত সকালে মোরগ ডাকার আগেই ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বিক্রি করেন স্থানীয় তারা মসজিদ এলাকায়। দিব্যি হাসিখুশি কবির ঠকান না কাউকে, তবে অনেক সময় নিজেই যান ঠকে। বলতে গেলে সারাদিন এক গাছ থেকে অন্য গাছ এভাবেই কেটে যায় কবিরদের দিন। ওতপ্রত ভাবে জড়িত গাছির জীবন সংগ্রামে বহু কষ্টের মাঝে অনেক প্রাপ্তিই যেন মিটে যায় গ্রাম বাংলার এই জনপ্রিয় বৃক্ষ খেজুর গাছের সাথে। গাছিদের জন্য এই সময়টা যেমন কষ্টের ঠিক তেমনি আনন্দদায়ক।

এখানকার গাছিরা সপ্তাহে ৫-৬ দিন সংগ্রহ করেন খেজুর রস। সংগৃহীত রসের একটি বিরাট অংশ নিয়ে গাছিরা পাড়ি জমান স্থানীয় ছোট-বড় হাটগুলোয়। শীতকালীন এই খেজুর রস বেচা-কেনার জন্য বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় স্থায়ী-অস্থায়ী হাটও রয়েছে এ জেলায়। হাটগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মির্জাপুর বাজার, শ্যামগঞ্জ, ভাটরা, আলেকজান্ডার, হায়দরগঞ্জ, দালাল বাজার, উত্তর তেমুহনীসহ আরো কয়েকটি স্থান।

উল্লেখ্য যে, এখানকার গাছিরা মূলত তারা গাছ কাটতে ব্যবহার করেন বিশেষ এক ধরণের লোহা দিয়ে তৈরী দা, দড়ি, আবার দা রাখার জন্য বাঁশ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এক প্রকার থলি। সে থলি গাছিরা রশি দিয়ে বেধে খুব যত্নে দা রেখে এ গাছ থেকে সে গাছে উঠা নামা করে খুব সহজে। গাছ কাটার জন্য গাছি শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোমর বরাবর গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেন। দড়িটা বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়। এই দড়ির দুই মাথায় বিশেষ কায়দায় গিট-বাধন দেওয়া থাকে। গাছে উঠার সময় গাছি অতি সহজে মহুর্তের মধ্যে গিট (বাধন) দুটি জুড়ে দিয়ে নিজের জন্য গাছে উঠার নিরাপদ ব্যবস্থা করে নেয়।