ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, অক্টোবর ৯, ২০২১
ছেলে
থাকেন বিদেশে আর মা দেশে
বসে করেন সহযোগিতা। মা
ও ছেলের রমরমা মানব পাচারের ব্যবসা
চলছে মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর
ইউনিয়নের চরনাচনা গ্রামে। এরই মধ্যে তাঁদের
প্রতারণার শিকার হয়ে লিবিয়াসহ কয়েকটি
দেশে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে অভিযোগ করে
ভুক্তভোগীদের পরিবার।
অভিযুক্তরা
হলেন চরমনা গ্রামের মৃত বারেক ফকিরের
ছেলে মিজান ফকির (৩৬) ও মিজানের
মা রিজিয়া বেগম (৬০)।
ভুক্তভোগী
একাধিক পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে
জানা যায়, মিজান এলাকায়
দালাল হিসেবে পরিচিত। প্রায় চার বছর ধরে
লিবিয়ায় থেকে মানব পাচারের
সঙ্গে জড়িত মিজান। তাঁর
এ কাজে দেশে বসে
সহযোগিতা করেন মা রিজিয়া
বেগম (৬০)। এ
পর্যন্ত তাঁদের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত যুবক লিবিয়ায় গেছেন।
তাঁদের মধ্যে নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে
অনেককেই পোহাতে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। অনেকে বন্দী হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও। তাঁদের লোভের শিকার হয়ে হারিয়েছেন সহায়-সম্বল।
কালিকাপুর
ইউনিয়নের চরনাচনা গ্রামের মজিবর পুস্তির ছেলে সানোয়ার পুস্তি,
নাজমুল পুস্তি, একই গ্রামের সেলিম
পুস্তির ছেলে রোমান পুস্তিসহ
অন্তত ১০ জনের সঙ্গে
কথা বলে এমন তথ্য
পাওয়া যায়।
একাধিক
ভুক্তভোগী আরও জানান, মিজান
ফকিরের মা রিজিয়া বেগম
মূলত গ্রাম থেকে বিদেশে যেতে
ইচ্ছুক লোক সংগ্রহ করেন।
প্রত্যেকের সঙ্গে ৫-৬ লাখ
টাকার চুক্তি করেন। পরে তাঁদের পাসপোর্ট
ও টাকা পাঠিয়ে দেন
লিবিয়ায় অবস্থান করা মিজান ফকিরের
কাছে। মিজান সুযোগ বুঝে লিবিয়ায় নিয়ে
যান। সেখানে গিয়ে স্পিডবোটের মাধ্যমে
ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন নৌপথে।
গভীর সমুদ্রপথে অনেকেই কোস্টগার্ডের কাছে ধরা খেয়ে
আবার লিবিয়ায় ফেরত আসেন। এরপর
পুনরায় টাকা দাবি করেন
মিজান। তাঁদের কাছে একপ্রকার জিম্মি
হয়ে অসহায় এসব পরিবার জায়গা-জমি বিক্রি করে
আবারও টাকা দেন মিজানের
মায়ের কাছে। এভাবেই প্রতারণার জাল পেতে অবৈধ
মানব পাচারের ব্যবসা করছেন মা ও ছেলে।
কথা
হয় সদর উপজেলার কালিকাপুর
গ্রামের ভুক্তভোগী আসাদ খালাসির বাবা
হবি খালাসির সঙ্গে। আসাদ মিজান ফকির
ও তাঁর মায়ের মাধ্যমে
লিবিয়ায় গিয়ে তিউনিসিয়ায় আটকা
পড়ে আছেন। বর্তমানে তিউনিসিয়ায় দালাল চক্রের হাতে রয়েছেন আসাদ।
হবি খালাসি দাবি করেন, তাদের
কাছ থেকে মিজান ফকিরের
মা গেল ১০ মাস
আগে লিবিয়া হয়ে ইতালি নেওয়ার
জন্য ৬ লাখ টাকা
নেন। তাঁদের কথামতো সব টাকা দেওয়ার
পরেও লিবিয়ায় যান আসাদ। কিন্তু
সেখানে থেকে নৌপথে স্পিডবোটের
মাধ্যমে একবার ইতালিতে যাওয়ার পথে কোস্টগার্ডের কাছে
ধরা পড়েন। সেখান থেকে তিউনিসিয়ায় আসাদকে
পাঠিয়ে দেন। পরে আসাদ
মিজানের সহযোগিতায় তিউনিসিয়ায় একটি দালাল চক্রের
কাছে রয়েছেন। কবে আসাদ ইতালি
যেতে পারবেন, সেটাও জানেন না তিনি।
চরনাচনা
গ্রামের জাফর পুস্তি নামে
এক ব্যক্তি বলেন, ‘মিজান ফকির অনেক দিন
ধরে লিবিয়ায় বসে ইতালিতে লোক
নেয়। তাদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই অসহায়
অবস্থায় রয়েছে। তার মা দেশ
থেকে পাসপোর্ট আর টাকা সংগ্রহ
করে। তাদের মা-ছেলের খপ্পরে
পড়ে অনেকেই দুর্ভোগে পড়েছে। আগে তাদের আর্থিক
অবস্থা করুণ ছিল, এখন
বাড়ির পাশে বালু ভরাট
করেছে, শিগগিরই বিল্ডিং বাড়ি তৈরি করবে।
তাদের প্রতারণা থেকে আমাদের রক্ষা
করতে হবে।’
নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন,
‘গ্রামের মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে মা-ছেলে
রমরমা ব্যবসা করছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা দিতেও
ভয় পায়। কারণ তাতে
বিদেশে বসে মিজান ভয়ভীতি
দেখায়। সেখানে ভুক্তভোগীদের ওপর নির্যাতন চালানোর
সম্ভাবনা থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব বিষয় নজরে
আনা উচিত।’
এসব
অভিযোগে ব্যাপারে রিজিয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের
বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে লোকজন। আমাদের
এলাকায় অনেক শত্রু রয়েছে।
তাঁরা আমাদের ভালো চায় না।
আমার ছেলে মিজান লিবিয়ায়
থাকে, মাঝে মাঝে কিছু
লোকজন লিবিয়া দিয়ে বিদেশে গেলে
তাঁদের খাওয়াদাওয়া আর থাকার জন্য
সহযোগিতা করে। এ জন্য
তো আমরা দালাল হয়ে
যাইনি।’
এ
ব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, ‘আমরা মানব পাচার
রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি।
কোনো ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা
আমলে নিয়ে তদন্ত করা
হয়। যদি কালিকাপুর গ্রামের
ওই মা-ছেলের ব্যাপারে
লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে কঠোর
ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া
পুলিশ নিজে এসব মামলা
সরাসরি করলে অনেকাংশে পজিটিভ
ফলাফল আসে না।’
আজকের
পত্রিকা