দীর্ঘ ৮ বছরের সংসার। হঠাৎ একদিন কাজ শেষে ঘরে ফিরে দেখেন স্ত্রী ও শিশু সন্তান নেই, নেই স্ত্রী ও শিশু সন্তানের ব্যবহৃত জামা কাপড় ও গহনা, এমনকি ঘরে নেই স্বামীর কষ্টে অর্জিত জমানো নগদ টাকাও। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাদের কোন সন্ধান না পেয়ে বেচারা স্বামী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
সাধারণ ডায়েরী সূত্রে জানা যায়, গত ৮ বছর পূর্বে (২০১৪ সালে) বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের আব্দুল কাদের হাওলাদারের পুত্র মো. দুলাল মিয়ার সাথে পারিবারিকভাবে পার্শ্ববর্তী গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের শুহুরী ব্রীজ এলাকার শানু গাজীর কণ্যা শারমিন আক্তারের বিয়ে হয়।
বিয়ে করেই স্বামী দুলাল তার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে নিয়ে নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার আলীগঞ্জে জনৈক সেলিম মাস্টারের ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। দুলাল ওখানে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। ভালোই চলছিল দুলালের সংসার। বিয়ের সাড়ে ৪ বছর পরে দুলালের স্ত্রী শারমিনের কোল ঝুড়ে আসে তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান মোঃ ঈসা (৩ বছর ৬ মাস)।
কিন্তু হঠাৎ করে তাদের সংসারে নেমে আসে ঝড়। গত ২৩ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দুলালের স্ত্রী শারমিন আক্তার তার শিশু পুত্রকে সাথে নিয়ে বাপের বাড়ী গলাচিপা যাওয়ার কথা বলে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। ওই দিন স্বামী দুলাল কাজ থেকে বাড়ী ফিরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার স্ত্রীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিয়ে জানার চেষ্টা করেন সে তার বাপের বাড়ীতে ঠিকঠাকভাবে পৌছাইছে কিনা? স্ত্রীর ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে দুলাল তার শ্বশুর শানু গাজীর মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে পারে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সেখানে যায়নি। এরপর বাসার আলমিরা খুলে দেখেন তার স্ত্রী শারমিন আক্তার দুলালের জমানো নগদ ১০ হাজার টাকা, ১ ভড়ি স্বর্ণের জিনিষ ও স্ত্রী এবং শিশু পুত্রের ব্যবহৃত সকল কাপড় চোপড় সাথে নিয়ে গেছে। ওই দিন থেকে স্বামী দুলাল সকল আত্মীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে খুঁজতে থাকেন। না পেয়ে ২৫ নভেম্বর ফতুল্লা থানায় স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে ফিরে পেতে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
ওই বিষয়ে স্বামী দুলাল মিয়া বলেন, আমার স্ত্রী (শারমিন আক্তার) বাপের বাড়ীতে যাওয়ার কথা বলে আমার একমাত্র শিশু পুত্রকে সাথে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে অদ্যবদি আর ফিরে আসেনি। যাওয়ার সময় আমার ঘরের আলমিরার মধ্যে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও কাপড় চোপড় নিয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমার স্ত্রী একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কোথায় আছে, না কেহ তাকে ফুঁসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গেছে, না কারো সাথে গোপনে সম্পর্ক করে তার হাত ধরে চলে গিয়েছে, তা আমি জানিনা। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানকে অনেক ভালোবাসি। আমার স্ত্রী ও শিশু পুত্রের সন্ধান জানতে এবং তাদের ফিরে পেতে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য কামনা করছি।
দুলালের শ্বাশুরী খাদিজা বেগম বলেন, মোর মাইয়া স্বামীর বাসায়গোনে মোগো বাড়তে বেড়াইতে আওয়ার কতা কইয়্যা আর আয় নাই। না কইয়া কুইম্মে বোলে গেছে। এ্যাহোনো পাই নাই। এ্যাহন মোরা হগুলডি মিল্যা বিচ্ছাইতেছি।
ফতুল্লা থানার সাব ইন্সেপেক্টর মোঃ কামাল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ওই ঘটনায় স্বামী দুলাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। তদন্ত চলমান আছে। নিখোঁজ স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।