জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, আগস্ট ৬, ২০২১
কুমিল্লায় করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ এখন গ্রামমুখী। জেলা সদরের চেয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে এখন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই গ্রামে গ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট এবং সদর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শহরের চেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আক্রান্ত মানুষ বেশি ভিড় করছে।
এসব আক্রান্তদের জন্য আইসিইউ এবং শয্যা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রোগী এবং তাদের স্বজনরা। শয্যা না পেয়ে কোনো কোনো রোগীকে মৃত অথবা মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে চিন্তিত হয়ে পড়েছে খোদ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিনিয়ত এভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে না বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় করোনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় ২ হাজার ৬১৮টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮০২ জন। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
কুমিল্লা সদর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৯০টি শয্যা রয়েছে। এখানে শয্যার চেয়েও বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ১৭০টি শয্যা রয়েছে। এখানেও শয্যার চেয়ে বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। বিশেষ করে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে এ জেলায় ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। আর মারা গেছে প্রায় অর্ধশতাধিক। তবে বাস্তবে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও সদর জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতালে এখন করোনার পৃথক ইউনিট গঠন করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আশঙ্কার কথা হচ্ছে- সরকারি এবং প্রাইভেটসহ কোনো হাসপাতালেই তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
বিশেষ করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সদর জেনারেল হাসপাতালে শয্যা এবং আইসিইউর জন্য হাহাকার করছেন। অনেক রোগী এবং তাদের স্বজনরা অপেক্ষা করছেন কেউ সুস্থ হলে কিংবা কারও মৃত্যু হলে যদি শয্যা খালি হয় সেই আশায়।
এ দুটি হাসপাতালে গিয়ে শয্যা না পেয়ে হতাশ হয়ে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। করোনা ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন না করা হলে সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা হ্রাস পাবে না বলে অভিমত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন জানান, দিন দিন পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই রোগীর চাপ বাড়ছে। শয্যা না থাকায় অনেক রোগী ফিরে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি রোগীদের সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সকল রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ডা. মহিউদ্দিন বলেন, করোনার উপসর্গ থাকলেও রোগীরা করোনা পরীক্ষা না করে ঘরে বসে থাকছে। এতে অবস্থার অবনতির ঘটছে। শেষ পর্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় এসে হাসপাতালে ভিড় করছে। অসচেতনতার কারণেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী। বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। এ মুহূর্তে শয্যা বাড়ানো ও অক্সিজেন সংকট যেন না হয়, সেদিকেই নজর বেশি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, শহর থেকে গ্রামে এখন সংক্রমণের হার অনেক বেশি। গ্রামের মানুষ সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।