ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

কুষ্টিয়ায় বিচারকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি | আপডেট: মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৫, ২০২২

কুষ্টিয়ায় বিচারকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ
কুষ্টিয়া আদালতের এক বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ তারিক এজাজের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন আইনজীবী, আদালতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, অফিস সহায়ক ও ভুক্তভোগীরা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ তারিক এজাজেকে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভোলা জেলায় বদলির প্রস্তাব করে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। উক্ত বদলির আদেশ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বদলির আদেশ প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় সে তড়িঘড়ি করে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সহায়ক কর্মচারী নিয়োগ সহ মূল্যবান জিনিস পত্র নিলামের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। তার দুসপ্তাহ আগে ১০ জন কর্মচারী ও অফিস সহায়ক নিয়োগ দেয়া হয়। আদালত পাড়ায় তার বিরুদ্ধে অনিয়ম করার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। 

বদলির আদেশ প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় তড়িঘড়ি জনবল নিয়োগ দেওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, পছন্দের লোককে নিয়োগ দিতে এমন কাজ করেছে ওই বিচারক। 

শুধু তাই-ই নয়, বিচারক শেখ তারিক এজাজের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যক্রম, ন্যায়বিচার না পাওয়া,  আইনজীবী, আদালতে কর্মরত সহায়ক কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। তার এমন কর্মকাণ্ড করা বিচারিক রীতি বিরুদ্ধ বলেও অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। 
প্রভাবশালী বিচারক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। 

বিচারকদের আচরণবিধিতে আছে যে, বিচারক আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থী জনগণের প্রতি ধৈর্যশীল হবেন এবং সম্মানজনক আচরণ করবেন। কিন্তু ওই বিচারক মহোদয়ের মধ্যে তা একেবারেই পরিলক্ষিত হয় না।

আদালত সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২৫  অক্টোবর কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহায়ক পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ২০ টি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেলের চেসিস বিক্রি করা হবে। এরআগে ১ অক্টোবর একজন করে স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর, ডেসপাস সহকারী, স্টোর কিপার, প্রসেস সার্ভার, দপ্তরি  এবং ৫ জনকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। তড়িঘড়ি করে বদলির আদেশ প্রক্রিয়াধীন থাকাবস্থায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন যা সন্দেহের উদ্রেক করে।

আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 
বিচারক শেখ তারিক এজাজের আচার ব্যবহার খুবই খারাপ। বাংলাদেশের বিচারের প্রতি সম্মান না জানিয়ে আইনজীবীদের প্রিভি কাউন্সিলে যেতে বলে। তার বিচারিক মন-মানসিকতা নেই। অনেকদিন ধরে লিফট বিকল হয়ে পড়ে আছে। টয়লেটের সে লিফট ও টয়লেটের সমস্যা সমাধান করে না। সে অযোগ্য, বিচারকের দায়িত্ব থাকার কোনো যোগ্যতাই তার নেই। উনি উদাসিন, দায়িত্ব পালন করে না, দায়িত্ব পলতে ব্যাপক অবহেলা করে সে। একজন দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে তার সচেতন হওয়া উচিৎ। 

জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াদুদ মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিফটের সমস্যা। সেটি সমাধান করেন না। কয়েক সপ্তাহ আগে দুইবার লিফটের মধ্যে আদালতের পিপি, পুলিশ ও আইনজীবীরা আটকা পড়েছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে লিফট দুটিই বিকল হয়ে আছে। খুবই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু কোনো সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে না। 

এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াদুদ মিয়া বলেন, বিচারক শেখ তারিক এজাজ নিজেকে খুবই ক্ষমতাবান মনে করেন। সে ছাত্রলীগের কোনো হলের ভিপি ছিলো। এজন্য কাউকে পাত্তা দেয় না সে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আইনজীবী বলেন, বিচারক শেখ তারিক এজাজ বিধিবহির্ভূতভাবে অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্ন আদেশ দেন বিচারক। এছাড়াও অনেক আইনজীবীর সঙ্গে অশোভন আচরণ ও বেআইনি আদেশ দেন ওই বিচারক। তিনি নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছে মতো সবকিছু করে। 

এবিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সরোয়ার এবং কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান  শেখ তারিক এজাজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।