ছেলে নিখোঁজের তথ্য থানায় জানানোর পর তিন দিনেও তাকে বের করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হত্যার শিকার বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মা।
ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, “আমার মেধাবী বাচ্চা ছেলেটা বুয়েটে পড়তে যাইয়ে শ্যাষ হইয়ে আসছে৷ আমরা তিল তিল করে আমাদের সন্তানরে গড়ছি৷ আমরা তিল তিল করে আমাদের বাচ্চাদের গড়ি আর আমাদের বাচ্চারা শেষ হয়ে যায়৷”
“এইটা তো সরকার দেখলো না৷ আজকে কেস (মামলা) হবে, পরশুদিন বের হয়ে চলে যাবে৷ দেশে এই তো হচ্ছে৷”
ছেলে হারানো এই মা আরও বলেন, “যার কারণে পরবর্তী সময়ে আরেকটা বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যায়৷ তা নাহলে কারোর সাহস ছিল না আবরার মরার পরে বুয়েটের কোনো বাচ্চার গায়ে হাত তোলা৷ এত কলিজা কাদের আছে তাদের তো আপনারা খুঁজে বের করতে পারেন না৷”
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ফারহানা ইয়াসমিন৷
তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ৷
তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন; পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ফারদিনের ময়নাতদন্ত হয়। পরে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ সাংবাদিকদের জানান, ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করা হয়েছে।
বিকাল সাড়ে ৫টায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স কবরস্থানের সামনে এসে থামে৷ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার মরদেহ কবরে নামানো হয়৷
এ সময় ফারদিন নূরের পরিবারের সদস্য ও বুয়েটের সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন৷ দাফনের সময় কবরস্থানে স্বজন ও সহপাঠীদের কান্নায় বিষাদের পরিবেশ তৈরি হয়৷
ফারদিনের মা বলেন, “আমার দাবি কি পূরণ করতে পারবেন আপনারা? আমার সন্তান তিনদিন যাবৎ নিখোঁজ ছিল৷ আপনারা তো খুঁজে আনতে পারেন নাই৷ আপনাদের কী বলবো, বলেন? আপনারা তো শুধু বলেই চলে যান৷”
“বুয়েটে তো আরও একটা বাচ্চা মারা গেল, তো আপনারা কী করতে পারছেন বলেন? আপনারা তো শুধু রিপোর্ট লিখবেন৷ আর কিচ্ছু করার নাই আপনাদের৷”
কাঁদতে কাঁদতে ফারদিনের মা বলেন, “আমার কলিজার টুকরা, আমার সোনামনি চলে গেছে৷ তাতে কারও কিচ্ছু আসে যায় না৷ আমার বাবা গেছে গা!”
পরিবার জানায়, ফারদিন শুক্রবার বাসা থেকে বের হয়েছিল বুয়েট ক্যাম্পাসে যাবার উদ্দেশে৷ পরদিন (শনিবার) পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরবে বলে জানিয়েছিল৷ কিন্তু শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷ রামপুরা থানা এলাকায় তার সর্বশেষ লোকেশন ছিল৷
রামপুরা থানায় জিডি করার পর পুলিশ দ্রুততম সময়ে মোবাইল ট্র্যাকিং ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কাজ শুরু করলে ‘কিছু একটা পাওয়া যেত’ বলে মনে করেন ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন৷
তিনি বলেন, “পুলিশ অনেক চেষ্টা করেছে। এরপরও যদি দ্রুততম সময়ে ভিডিও ফুটেজগুলো সংগ্রহ ও সর্বশেষ যেসব পয়েন্টে এবং কোন কোন স্থানে তার ফোন সচল ছিল সেটা শনাক্ত করলে কিছু একটা পাওয়া যেত।”
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “দুইদিন আগে তার এক আত্মীয় আমাদের থানায় এসে রিপোর্ট করেছেন, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে তার লোকেশন দেখলাম তার এক বান্ধবীর বাড়ির কাছে। পরে তার লাশ পাওয়া গেল। এটা আমাদের ইনকোয়ারিতে আছে। সঠিক তথ্য পেলেই আপনাদেরকে জানাব।”