ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর বঙ্গোপসাগরের লোনা জলে পূণ্যস্নানের মধ্যে দিয়ে সাঙ্গ হলো সনাতন ধর্মবলম্বীদের রাস উৎসব। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ভোর ৬টায় পূজা অর্চনা শেষে জোয়ারের পানিতে শুরু হওয়া পূণ্যস্নান শেষ হয় সকাল ৭টায়। হাজার হাজার পূণ্যার্থীরা এই স্নানে অংশ নেয়। এবার শুধুমাত্র পূণ্যর্থীদের আগমনে রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিকতার কোন কমতি ছিলনা হিন্দু ধর্মবলম্বীদের। মনোবাসনা, পাপমোচন ও সৃষ্টিকর্তার কৃপালাভের জন্য এসময় পূণ্যার্থীরা মন্ত্রপাঠ ও শঙ্খ বাজিয়ে আরাধানায় মগ্ন থাকে। এর আগে রবিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা পূজার মধ্যে
দিয়ে শুরু হয় তিনদিন ব্যাপী এবারের রাস উৎসব। তবে আগে থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবারও হয়নি রাস মেলা।
প্রতিবছর কার্তিক মাসের (খ্রিস্টীয় নভেম্বর) হিন্দু ধর্মবলম্বীদের রাস উৎসব এবং পূণ্যস্নানের জন্য দুবলার চর বিখ্যাত। যদিও বলা হয় থাকে, ১০০ বছর ধরে এ রাস উৎসব হয়ে আসছে। তবে জানা যায়, ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক হরিজন বনবাসী ভক্ত (১৮২৯-১৯২৩) এই রাস উৎসব চালু করেন। প্রতিবছর অসংখ্য পূণ্যার্থী রাস পূর্নিমাকে উপলক্ষ্যে করে এখানে সমুদ্র স্নান করতে আসেন। দুবলার চরে সূর্যোদয় দেখে ভক্তরা সমুদ্রের জলে ফল ভাসিয়ে দেন। কেউবা আবার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ভজন-কীর্তন গেয়ে মুখরিত করেন চারপাশ।
আবার কারো কারো মতে, শারদীয় দূর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃঞ্ষ। এ উপলক্ষেই দুবলায় পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।
মোংলা থেকে দুবলার চরে আসা ভক্ত তরুন চন্দ্র বলেন, 'রাস উৎসবে এসে লোনা পানিতে স্নান করলে অতীতের সব পাপ মোচন হয়, এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে এসে পূণ্যস্নান করেছি। অতীতের সব পাপা মোচন হয়ে গেছে। আগামীতে আমি ভালো হয়ে চলবো। আমি কিছু মানত করেছি আশা করি তা পূরণ হবে'।
সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে এবারের বার্ষিকী রাস উৎসব। প্রায় ১০ হাজার পূর্ণার্থী এই উৎসবে যোগ দেয় বলেও জানান তিনি।