নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, অক্টোবর ৩, ২০২১
চুয়াডাঙ্গার
আলমডাঙ্গা উপজেলায় দুই বান্ধবীকে ধর্ষণের
পর হত্যা মামলায় আজিজুল ওরফে আজিদ ওরফে
আজিজ (৫০) ও মিন্টু
ওরফে কালুর (৫০) ফাঁসি কার্যকর
হবে আগামীকাল সোমবার।
যশোর
কারাকর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে সব প্রস্তুতি
সম্পন্ন করেছে। রাত পৌনে ১১টায়
তাদের দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
তাই
শেষবারের মতো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আজিজুল ও
মিন্টুর সঙ্গে শনিবার সকালে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে
দেখা করে তার পরিবার।
এ সময় তারা কান্নায়
ভেঙে পড়েন।
মৃতদণ্ডপ্রাপ্তরা
হলেন— চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলিহিমের ছেলে মিন্টু ওরফে
কালু ও একই গ্রামের
বদর ঘটকের ছেলে আজিজ ওরফে
আজিজুল।
জানা
যায়, শনিবার সকালে আলমডাঙ্গার খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর
রহমান রুন্নুর নেতৃত্বে আজিজুলের বাবা বদর মণ্ডল
ওরফে বদর ঘটক, মা
রাসুলা খাতুন, বড়ভাই সভা মণ্ডল ও
মেজভাই আব্দুর রশিদ এবং আজিজুলের
সাবেক স্ত্রী সুন্দরী খাতুন, ছেলে সজিব মিয়া
ও মেয়ে সীমা খাতুন,
মিন্টুর বাবা আলিহিম, মা
আমিরুণ খাতুন, বড়ভাই শুকচান মণ্ডল ওরফে ফেন্টু, বড়বোন
আলিমন খাতুন ওরফে উলি, ছোটবোন
আনজিরা খাতুন, সাবেক স্ত্রী বেদেনা খাতুন, মেয়ে রিপা খাতুনসহ
অর্ধশতাধিক আত্মীয়স্বজন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে
গিয়ে আজিজুল ও মিন্টুর সঙ্গে
শেষ সাক্ষাৎ করেন।
ইউপি
চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নু এ তথ্য নিশ্চিত
করেন। এ সময় পরিবারের
সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
চুয়াডাঙ্গা
আদালত সূত্র ও মামলার বিবরণীতে
জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার
জোড়গাছা গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী
ফিঙ্গে বেগমকে ২০০৩ সালের ২৭
সেপ্টেম্বর রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা
হয়। হত্যার আগে তাদের দুজনকে
ধর্ষণ করা হয় বলে
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে
বলা হয়, গলায় গামছা
পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত
করতে গলাকাটা হয় ওই দুই
নারীকে। এ ঘটনায় নিহত
কমেলা খাতুনের মেয়ে নারগিস বেগম
খুনের পর দিন আলমডাঙ্গা
থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুজনসহ চারজনকে
আসামি করা হয়। অপর
দুজন হলেন— একই গ্রামের সুজন
ও মহি। মামলা বিচারাধীন
আসামি মহি মারা যান।
২০০৭
সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার
নারী ও শিশু নির্যাতন
দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও মিন্টুকে
মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
এর পর আসামিপক্ষের লোকজন
হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে
ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল
শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা
বহাল রাখেন।
২০১২
সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন
আদালতের রায় বহাল রাখার
আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি
বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল
বিভাগ দুই আসামির রায়
বহাল রাখেন এবং অপর আসামি
সুজনকে বেকসুর খালাস দেন। এ বছরের
২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার
থেকে মুক্তি পান খালাসপ্রাপ্ত সুজন।
পরে
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আজিজুল ও মিন্টু রাষ্ট্রপতির
কাছে প্রাণভিক্ষা চান, কিন্তু তা
নামঞ্জুর হয়।
৬
সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে
কারা অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ৮ সেপ্টেম্বর সেই
চিঠি গ্রহণ করে।
এদিকে
যশোর কারাগারের একটি সূত্র বলেছে—
ফাঁসির জন্য কারাগারের জল্লাদ
মশিয়ার, কেতু কামালসহ বেশ
কয়েকজনের প্রশিক্ষণ চলছে।
এ
ছাড়া ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতসহ ইতোমধ্যে
রায় কার্যকরের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ
বিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের
জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, এ
দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য
আদেশ এসেছে। দুই আসামির পরিবারের
পক্ষ থেকে শেষ দেখা
করে গেছেন অর্ধশতাধিক লোক।
আগামীকাল
সোমবার রাতে আজিজুল ও
মিন্টুর ফাঁসি কার্যকর করতে সব প্রস্তুতি
সম্পন্ন করা হয়েছে। ফাঁসির
রায় কার্যকরের সময় জেলা প্রশাসন,
পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের
প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।