বদলেছে মানুষ, বদলেছে পৃথিবী, বদলেছে জলবায়ু। পরিবর্তনের এ অবিরাম যাত্রায় একবিংশ শতাব্দীর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্ব। যেখানে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
বিগত দুই দশকের জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করলেই আসন্ন সংকটের পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। বইয়ে পড়া "সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ, সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁর গান, পাকা ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ- এসব ই পাবেন একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে। কিন্তু, মাত্র কয়েক দশক পেরিয়ে এগুলো সব ই প্রায় হারিয়েছি।
জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের মাঝে দেশকে ভালো রাখতে প্রথমআলো'র ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঝালকাঠি বন্ধুসভা ২ই নভেম্বর, ২০২২ বুধবার সপ্তাহব্যাপী "একটি করে ভালো কাজ" এর জন্য "তালের চারা রোপণ ও বিতরণ" একটি যুগোপযোগী এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা এই বিরুপ পরিবেশে বজ্রপাত সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
উদ্যোগের কথা শুনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন খান তার বক্তব্যে বলেন- বন্ধুসভা'র কাজ অনেক পূর্ব থেকেই দেখে এসেছি। তারা দেশব্যাপি নানান আয়োজন করে থাকে। যে আয়োজনে শিক্ষার্থীদেরও সম্পৃক্ত করে কাজ করে। পূর্বে এই বিদ্যালয়ে মাদক বিরোধী শপথ, বৃক্ষরোপণ, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে এখানে সভা সেমিনার করেছে। আজ এখানে তাল গাছের বীজ ও চারা রোপন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে সচেতণ মূলক বার্তা পৌছানো হলো এতে করে এই এলাকার শিক্ষার্থীদের অনেকেই তাদের বাড়ীর আশেপাশে এই চারা বা বীজ বপন করবে বলে আশা রাখি। তিনি ঝালকাঠি বন্ধুসভার এমন উদ্যোগকে সাধু বাদ জানান।
চারা সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশ গবেষকরা বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ বিশেষ করে তালগাছ, নারিকেল গাছ,বট গাছ সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকারী গাছ লাগানোর প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাঠ পর্যায়ে গাছ লাগানোর কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। এতে শিক্ষার্থীরা পরিবেশের ভারসাম্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে।
সংগঠনের উপদেষ্টা ও প্রতিনিধি আ.স.ম. মাহমুদুর রহমান পারভেজ তার বক্তব্য বলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- "তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে"। হ্যাঁ, তালগাছ মুক্ত আকাশের নিচে এক পায়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতিকে নিঃস্বার্থে উপকার করার জানান দিচ্ছে। সাধারণত একটি তালগাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু হয়। উঁচু গাছ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে গিয়ে আমাদের রক্ষা করে। এ ছাড়াও ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করে। তালগাছের আকর্ষণে বাড়ে মেঘের ঘনঘটা; ঘটে বৃষ্টিপাতও। তালগাছের শিকড় মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত প্রবেশ করায় ঝড়ে হেলে পড়ে না কিংবা ভেঙে পড়ে না। যেখানে কোনো কিছু চাষ হয় না সেখানেও তালগাছ তার শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। নতুন রাস্তার ল্যান্ডস্কেপ, বাঁধ ও নদীভাঙন ঠেকাতে এর রয়েছে সফল প্রয়োগ।
এসময় সংগঠনের সভাপতি আবির হোসেন বলেন, আমরা সবাই স্কুলের আঙিনায়, নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায়, বড় হাওয়ের পাড়ে, নদীর পাড়ে, বিভিন্ন রাস্তায় এই তালগাছ রোপন করে আগামীতে বজ্রনিরোধক হিসেবে বেড়ে ওঠার জন্য এই চারা পরিচর্যা করবো। এতে আমি, আপনি, আমরা তথা দেশ উপকৃত হবে এবং জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের হাত হতে কিছু পরিমাণ রেহাই পাওয়া যাবে।
তালের চারা রোপনের সময়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন রানা বলেন, ঝালকাঠি বন্ধুসভার অর্ধশতাধিক বন্ধু নিরলসভাবে তালগাছের চারা ও বীজ সংগ্রহের জন্য কাজ করেছে এবং ইতোমধ্যেই ১হাজারেরও বেশি তালগাছের চারা ও বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে। যা আজ হতে আগামী ০১ সপ্তাহব্যাপী জেলার বিভিন্ন স্থানে যেমন: বেড়িবাধ, বিলের পার, দিঘির পার, রাস্তার দু পাড়ে রোপন করা হবে। চারাগুলো আগামিতে যাতে বেড়ে উঠতে পারে সেজন্য আলাদাভাবে পরিচর্যা করা হবে।
এছাড়াও তালের চারা রোপন ও বিতরণ কালে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অর্ধশত বন্ধু এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যারা উপস্থিত থেকে এই আয়োজনের সফল করেন।