দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ সোমবার সকালে শেষ হয়েছে দুইদিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সূর্য পূজা (ছট পূজা)।
রবিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে ফুলবাড়ী পৌর শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর পূর্ব তীরে দুইদিন ব্যাপী সূর্য পূজা (ছট পূজা) শুরু হয়। যা আজ সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকালে শেষ হয়েছে।
স্বামী, সন্তান ও সংসারের মঙ্গলের জন্য সূর্য্য দেবতার কৃপালাভের আশায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা নিজ নিজ বাড়ী থেকে ডালা, কূলা ভর্তি করে নানা রকমের ফলমূল, নিজের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি, মিষ্টান্ন, আটার তৈরি ঠেকুয়াসহ বিভিন্ন প্রসাদ সাজিয়ে গত রবিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে নদীর তীরে সূর্য্য দেবতার কৃপা লাভের আশায় সূর্য্যরে দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করেন উপবাস থাকা নারীরা। সূর্যাস্তের পর নারীরা কূলার প্রসাদ ডালায় উঠিয়ে নিয়ে ফিরে যান নিজ নিজ বাড়ীতে। পরদিন সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাত দুইটার পর থেকে আবারো ফিরে আসেন নদীর তীরে কূলার প্রসাদ সাজিয়ে প্রতিক্ষায় থাকেন সূর্য উঠার জন্য।
এদিকে সূর্য ওঠার পর থেকেই নদীর তীরে অবস্থানরত নারীরা সূর্য্য দেবতার কৃপালাভের জন্য নদীতে স্নান শেষে কূলায় ভর্তি প্রসাদ নিয়ে অর্ঘ দেন সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে। প্রসাদ অর্ঘ শেষে বিবাহিতা নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এভাবেই সম্পন্ন হয় তাদের পুজা।
এদিকে সূর্য্য পূজাকে (ছট পূজা) কেন্দ্র করে ছোট যমুনার তীরে দুইদিন ব্যাপী বসেছিল হিন্দু ধর্মালম্বী সকল বয়সি নারী ও পুরুষের মিলনমেলা। ঢাক-ঢোলের তালে মুখরিত ছিল নদীর তীরের পূজা স্থল। আলোক ঝলমল আলোকসজ্জাসহ কিশোর-কিশোরীদের নানা রকম আতশবাজী আর ছুড়ছুড়িতে আলোকিত ছিল পুরো পূজা এলাকা।
ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় কালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয় প্রকাশ গুপ্ত বলেন, সূর্য্য সূর্য্যােপাসনার উৎসব ভারতে বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশসহ নেপালের অবাঙালি হিন্দু ধর্মালম্বীরা পালন করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয়ভাবে এই সূর্য্যপূজা যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ছট পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের প্রধান পূরহিত শ্রী সুধামা উপাধ্যয় বলেন, সূর্য্য পূজা (ছট পূজা) মূলত অবাঙালি হিন্দু ধর্মালম্বী নারীরা স্বামী, সন্তান ও সংসারের মঙ্গলার্থে সূর্য্য দেবের কৃপা লাভের আশায় নদীর তীরে সূর্য্য পূজা (ছট পূজা) করে থাকেন। এই সূর্য্য পূজা (ছট পূজা) ভগবান শ্রী রামের স্ত্রী সিতা মইয়া এবং পার্বতী দেবীও পালন করেছিলেন।
থানার কর্মকর্তা (ওসি) আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, সূর্য্য পূজাকে (ছট পূজা) কেন্দ্র করে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ছোট যুমনার নদীর পূর্ব তীরে সূর্য্য পূজার (ছট পূজা) নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি ছিল। প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও সজাগ ছিলেন।