বরগুনা আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। দুই গ্রুপের হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের আমতলী ও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলন রোববার বেলা ১২টার শুরু হয়। শুরুতেই উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম মৃধা বক্তব্য দেন। পরে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশী জিএম ওসমানী হাসান বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্যের পরপরই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।
তাৎক্ষণিক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সামনে এর প্রতিবাদ করেন আমতলী পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর জিএম মুছা, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জিএম হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি সাবেক পৌর মেয়র নাজমুল আহসান নান্নু ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গোলাম সরোয়ার ফোরকান মিয়া। এ নিয়ে দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে সম্মেলনস্থল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সভাস্থলের চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। নেতা-কর্মীরা ছোটাছুটি করে সম্মেলন স্থল ত্যাগ করেন।
আমতলী একে স্কুল এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক সকল দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টা ব্যাপী চলে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারধরের ঘটনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল অঞ্চল) অ্যাড. আফজাল হোসেন ও শাম্মী আহম্মেদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বারবার দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
অভিযোগ উঠেছে, সম্মেলন সভামঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হন। তাঁদের সামনেই উপজেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি মো. সবুজ ম্যালাকার, শাহাবুদ্দিন শিহাব ও ইসফাক আহম্মেদ, সুজন প্যাদা, রুহুল আমিন ও ত্বোহাসহ ২০-২৫ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জিএম ওসমানী হাসান ও পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর জিএম মুছাকে পিটিয়ে আহত করেন। পরে তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আশ্রয় নেন।এদিকে সভামঞ্চের বাইরে দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন। ঘণ্টাব্যাপী চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারধরের ঘটনা। কেন্দ্রীয় নেতারা থামাতে না পেরে সভামঞ্চ ছেড়ে নিরাপদে চলে যান। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
এতে গুরুতর আহত হয়েছেন, জিএম মুছা, জিএম হাসান, গাজী রুবেল, গাজী মো. বায়েজিদ, শাহীন, সোহেল রানা, রাকিবুল ইসলাম, আলী হোসেন, জসিম হাওলাদার, তাজুল ইসলাম, মুববি সরোয়ার সোয়াম, মধু মোল্লা, দুলাল পাহলান, ময়জদ্দিন ও সাংবাদিক মাহবুবুল আলম। আহতদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে জিএম মুছা, সোহেল রানা, বায়েজিতকে উন্নত চিকিৎসার বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঘণ্টাখানেক পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা আবার সভাস্থলে আসলে সম্মেলন শুরু করেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে সম্মেলনে মারধরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কমিটিতে পদ পদবী না দেওয়ার ঘোষণা দেন।
ওই সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাংসদ অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নবনির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গির কবির। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদ, সদস্য মো. আনিসুর রহমান ও গোলাম রাব্বানী চিনুনহ প্রমুখ। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশন না করেই চলে যান।
আমতলী পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর জিএম মুছা বলেন, ‘আখতারুজ্জামান বাদল খানের উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপর হামলা করেছে। এ হামলায় আমার পক্ষের ১৮ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে আমাকে ও আমার ভাই জিএম ওসমানী হাসানসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে মারধর করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান সম্মেলন শুরু থেকেই উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছে। তাঁর উসকানিতেই এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে পৌর মেয়র মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘জিএম মুছা ও তার ভাই হাসান, নাজমুল হাসান নান্নু, ফোরকান মিয়া, শাহজাহান কবির ও গাজী সামসুল হক সম্মেলন গন্ডগোল করতেই সভামঞ্চে এসেছে এবং তারাই সম্মেলন বানচাল করতেই সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তাদের হামলায় আমার অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের কঠোর হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’