সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উদ্ভুত পরিস্থিতি বিষয়ে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি সীমান্তে যাতে কোন ব্যতয় না ঘটে সে আশ্বাস দিয়েছে।
রবিবার (৩০ অক্টোবর) টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)'র মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই দুঃখ প্রকাশ করেন।
সকাল ১০ টায় শাহপরীরদ্বীপ বিওপি সংলগ্ন সাউদার্ন পয়েন্টে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) অধিনায়ক ও বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চ, পিইন ফিউ এর মধ্যে বিজিবি-বিজিপি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত পতাকা বৈঠকে আট সদস্য বিশিষ্ট বিজিবি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে দেন টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার এবং মিয়ানমারের বিজিপি'র সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পুলিশ লেঃ কর্ণেল ইয়ে ওয়াই শো।
তিন ঘন্টাব্যাপী পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় উদ্ভুত পরিস্থিতি ছাড়াও অবৈধভাবে মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচার রোধ সম্পর্কে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
শান্তি ও সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে বেলা ২টা ৫০ মিনিটে পতাকা বৈঠক শেষ হলে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল স্ব-দেশের উদ্দেশ্যে প্রত্যাবর্তন করলে এবিষয়ে বিকাল চারটায় ২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন মিলনায়তনে প্রেস ব্রিফিং করেন অধিনায়ক লে. কর্ণেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার। এসময় তিনি জানান, দুটি বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ, আস্থা এবং নির্ভরতার পরিবেশ তৈরীর ও ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর হেলিকপ্টার উড্ডয়ন, সীমান্ত এলাকায় ক্ষুদ্রাস্ত্র এবং ভারী অস্ত্রের ফায়ারিং, জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ তীব্র প্রতিবাদ জানান। সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখা, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে চলমান সংঘাতের জের ধরে যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন গোলা পতিত না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার বিষয়ে বিজিপিকে বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেশী সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংকট অতি শিগগিরই সমাধান এবং সীমান্তে চলমান বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি দ্রুত নিরসণ হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন বিজিপি। বিজিপি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। উক্ত পতাকা বৈঠকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং সীমান্তে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে উভয় দেশের অধিনায়ক একসাথে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মিয়ানমার বিজিপির প্রশ্নে বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তের কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ভূমি ব্যবহার করতে দেবেনা। এছাড়া তিনি জানান, এটি ছিল নিয়মিত বৈঠক। ব্রিফিংকালে সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল আজিজুর রউফ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসে উখিয়া উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত বরাবর মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গুলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে দুটি মর্টারশেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়ে। তবে বিষ্পোরিত না হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি। এর পরের দিন মিয়ানমারের যোদ্ধা বিমান থেকে ছুঁড়া আরো দুটি মর্টারশেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়ে। এতে সীমান্তে বসবাসরত বাসিন্দাদের মাঝে বাড়ে আতংক। এভাবে ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে আরো কয়েকটি মর্টারশেল। যার কারনে সীমান্তের শূণ্য রেখায় মর্টারশেল বিষ্পোরিত হয়ে এক রোহিঙ্গা মারা যায় এবং আহত হয় ৬ জন। একারণে সীমান্তে বসবাসরত অনেকে আতংকিত হয়ে এলাকা ছেড়ে আশ্রয়ে চলে যান দুরে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় মিয়ানমারের রাস্ট্রদূতকে ডেকে কয়েক দফা কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার। তবুও সীমান্তের পরিস্থিতি একই রকমের রয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত হয়ে টেকনাফ সীমান্ত পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলতে থাকে গুলাগুলি ও গোলা বর্ষণ। এতে আরো আতংকিত হয়ে পড়ে সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশী বাসিন্দারা।
এ অবস্থায় ১০ অক্টোবর সীমান্ত পরিস্থিতি দেখতে পরিদর্শনে যান বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। সীমান্ত পরিদর্শনের পাশাপাশি দেখেন বিজিবি সদস্যদের কার্যক্রম।
ওই সময় সাংবাদিকদের তিনি জানান, প্রতিবাদলিপি পাঠানোর পাশাপাশি বিজিপির সংগে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা চালান। সময় নির্ধারন না হলেও পতাকা বৈঠকের সম্মতি জ্ঞাপন করেন বিজিপি। চলতি মাসের ২৩ তারিখ সর্বশেষ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গুলাগুলির শব্দ শুনা গেলেও ধীরে ধীরে কমে যায়। এরপর থেকে আর শুনা যায়নি। চলমান সংঘাতে সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে অবশেষে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে বৈঠকে রাজি হলো মিয়ানমার বিজিপি।