ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

দূর্লভ “রক্তচন্দন”গাছ পাওয়া গেল মধুপুর বনাঞ্চলে!

হাফিজুর রহমান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, অক্টোবর ২৪, ২০২২

দূর্লভ “রক্তচন্দন”গাছ পাওয়া গেল মধুপুর বনাঞ্চলে!

টাঙ্গাইলের মধুপুরের গড়াঞ্চলের ভিতরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত দোখলা ডাক বাংলোর সামনে পাওয়া গেছে দূর্লভরক্তচন্দনগাছের। আলোচিতপুষ্পা দ্য রাইজতেলেগু সিনেমার সেই রক্তচন্দন গাছ রক্ত রক্তচন্দন গাছ টিকে দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মধুপুর জাতীয় উদ্যানে বিরল  প্রজাতির গাছটি। মধুপুর দোখলা বন বিশ্রমাগারের পাশে রয়েছে রক্তচন্দন গাছটি। রক্তচন্দনের বহুমুখী উপকারিতার মধ্যে বাতের ব্যথা জীবাণুনাশক হিসেবে এর কার্যকারিতার কথা জানা গেছে। ব্রাজিল ভারতের আবহাওয়া গাছটির বেড়ে উঠার পক্ষে সহায়ক। গাছটির কান্ডে একটু শক্ত করে খোঁচা দিলেই সেখান থেকে লাল রঙের কষ ঝরতে থাকে। গাছটির ফুল ফল না হওয়ায় এই গাছটি বংশ বিস্তারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন আগত দর্শনার্থী স্থানীয়রা। কলম বা বৈজ্ঞানিক উপায়ে বংশ বিস্তারের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার আশ্বাস দিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা।


জানা যায়, ১৯৬২ সালে নির্মিত মধুপুরের অরণখোলা মৌজায় সংরক্ষিত বনভূমিতে বন বিশ্রামাগারটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এর পূণ্য স্মৃতিবহ। ১৯৭১ সালের ১৮ জানুয়ারী থেকে ২১ জানুয়ারী পর্যন্ত তিনদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এই বন বিশ্রামাগারে অবস্থান করেছিলেন।


বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান রচনার সাথেও এই বন বিশ্রামাগারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর সেই বিশ্রামাগারের সামনেই রক্তচন্দন গাছ রয়েছে। সেই বিশ্রামগারের সামনে বেড়ে উঠা রক্ত চন্দন গাছ দেখতে প্রতিদিন দর্শনার্থী স্থানীয়রা ভিড় করছে। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত মানুষের একটু বেশী ভিড় হয়। বিশেষ করে ভারতেরপুষ্পাছবি প্রচারের পর থেকে দেশের দূর দূরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসে।


ধনবাড়ী থেকে গাছটি দেখতে আসা দর্শনার্থী তারেক বকল ব্যাংক কর্মকর্তা আসাদ্দুজামান কাকন বলেন, "ইন্ডিয়ারপুষ্পা দ্য রাইজছবিতে রক্তচন্দনের গাছ দেখেছিলাম। এখানে এই গাছ আছে শুনেছি।আজকে আমি এদিকে ঘুরতে এসেছিলাম, তো ঘুরতে এসে দেখি আসলেই সেটা, একদম অবাক করা কাহিনি, গাছে ভেতর থেকে রক্তের মতো বের হচ্ছে, তো আমাদের খুবই ভালো লাগতেছে।"


রক্তচন্দন সংরক্ষণে সরকারের পদক্ষেপ চেয়ে এই দর্শনার্থীরা বলেন, “আমি বলব, সরকারি পর্যায়ে যারা রয়েছেন তারা যেন গাছটি সংরক্ষণ করেন। কারণ গাছটি বিরল, সব জায়গায় পাওয়া যায় না, গাছটি যদি সংরক্ষণ করা হয় বা প্রজনন করা হয় তাহলে খুবই ভালো হয়।


মধুপুরে রক্ত চন্দন গাছটি দেখতে আসা টাঙ্গাইলের সোনিয়া তালুকদার ঘটাইলের মাহমুদা করিম জানান, এই গাছের কথা শুনে সেটি দেখতে এসেছেন তারা। তারা বলেন, “গাছে নাকি খোঁচা দিলেই রক্ত বের হয়, এটা নিজের চোখে দেখার জন্য চলে এসেছি আমরা। খোঁচা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে রক্তের মতো বের হয় সেটা না দেখলে বিশ্বাস হয় না।” “কিছু দিয়ে খোঁচা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত বের হয়, তো খুব ভালো লাগল জিনিসটা, সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি গাছটা যেন সংরক্ষণ করা হয় এবং গাছের বংশ বিস্তারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।


স্থানীয় শোকুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শোলাকুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সহভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী জানান, যারাই উদ্যানে আসছেন তারাই রক্তচন্দন গাছটি দেখছেন। প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীদের। গাছটিতে খোঁচা দিলেই লাল রংয়ের কষ ঝরতে থাকে, যা দেখতে রক্তের মতো। বিষয়টি কৌতুহল বাড়িয়েছে আগত দর্শনার্থীদের।


টাঙ্গাইল বন বিভাগের মধুপুরের দোখলা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মধুপুর জাতীয় উদ্যানের রেস্ট হাউসের ঠিক সামনে গাছটির অবস্থান। বয়স আনুমানিক ৪০ থেকে ৪৫ বছর হবে। এটি এখন পরিপক্ক অবস্থায় রয়েছে। গাছে আঘাত করলেই রক্তের মতো লাল কষ বের হয়। গাছটি আগে থেকেই দেখেছি। কিন্তু জানা ছিল না এটি রক্তচন্দন গাছ।  সম্প্রতি গাছটি শনাক্ত করতে পেরেছি। গাছটি ঘিরে মানুষের কৌতুহল তৈরী হওয়ায় উৎসুক জনতার খোঁচাখুঁচি থেকে গাছটি বাঁচাতে এর চারপাশে বেড়ার ব্যবস্থা করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। মুখে মুখে রটতে থাকে উদ্যানের এই বিরল গাছটির কথা। গাছ দেখতে প্রতিদিনই আগ্রহী মানুষের ভিড় বাড়ছে। ইতোমধ্যে যাতে কেউ গাছের ক্ষতিসাধন করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তার জন্য পাহারা বসিয়েছি আমরা।


এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, এটি দুর্লব দামি গাছ। এই গাছটি রক্ষনাবেক্ষণের জন্য আমরা সবাই চেষ্টা করছি। এই গাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য আমরা বীজ থেকে চারা উত্তোলনের জন্য চেষ্টা করছি।