নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শনিবার, অক্টোবর ২, ২০২১
ময়মনসিংহের
হালুয়াঘাট সিমান্তবর্তী এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই ওপারের পাহাড় থেকে খাবারের সন্ধানে
নেমে আসে হাতির পাল।
তাণ্ডব চালায় ফসলি জমি ও
ঘরবাড়িতে। শুরু হয় কৃষকদের
সাথে হাতির পালের যুদ্ধ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত শত
কৃষক টর্চলাইট লাঠি, মশাল, পটকা ও বাঁশি
বাজিয়ে নেমে পড়েন হাতি
তাড়াতে। জানা যায়, সন্ধ্যা
নামতেই জামগড়া মহিষলেটি, ধোপাঝুড়ি, কোচপাড়া, রঙ্গমপাড়া এবং কড়ইতলী এলাকায়
চলে হাতির তাণ্ডব। স্থানীয় কৃষকদের অন্তত ৫০ একর জমিতে
রোপণকৃত রোপা আমন ধান
খেয়ে এবং পা দিয়ে
পিষ্ট করে নষ্ট করে
ফেলেছে হাতি। এতে বিপাকে পড়েছেন
স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয়
কৃষি বিভাগের দাবি, পাহাড়ি বন্যহাতির তাণ্ডবে উপজেলার সীমান্তবর্তী ভূবনকুড়া ইউনিয়েনের কয়েকটি গ্রামে ৩২ জন কৃষকের
প্রায় ৪০ একর জমির
ফসল নষ্ট হয়েছে। তবে
বাস্তবে এ ক্ষতির পরিমাণ
আরও বেশি হবে বলে
জানিয়েছে পাহাড়ি কৃষকরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, সীমান্তে হাতির সঙ্গে মানুষের যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। তবে সীমান্তবর্তী ভূবনকুড়া
ইউনিয়নের গ্রামগুলিতে বিগত কয়েক বছর
হাতির আক্রমণ খুবই কম ছিল।
তবে এ বছরের বোরও
আবাদ এবং কাঁঠাল পাকার
মৌসুম থেকে হাতির দল
লোকালয়ে চলে আসা নিয়মে
পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা হলে দলবেধে অন্তত
৫০ থেকে ৭০টি বন্যহাতি
দলবেধে খাবারের সন্ধানে চলে আসে লোকালয়ে।
এতে আতঙ্কে রাত কাটে সিমান্তবর্তী
এলাকার কৃষকদের।
সীমান্তের
অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকায়
কাঁটাতারের বেড়া না থাকায়
বন্যহাতির দল অবাধে লোকালয়ে
প্রবেশ করে। এতে এসব
এলাকার মানুষের বোরো এবং আমন
মৌসুমে ফসল রক্ষায় নির্ঘুম
রাত কাটাতে হয়। হাতি থেকে
ফসল রক্ষার জন্য স্থানীয়ভাবে টর্চলাইট,
মশাল, পটকা ও বাঁশি
বাজিয়ে রাত জেগে পাহারা
দিতে হয়। হাতি তাড়ানোর
মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় ক্ষোভ
প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
এ
বিষয়ে সীমান্ত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানায়, যে জমি থেকে
তাদের সারা বছরের খাদ্য
চাহিদা পূরণ হউয়, এ
বছর সেই জমির ধান
সব নষ্ট করে দিয়েছে
হাতির পাল। এখন তারা
কিভাবে বছর পার করবে,
তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
তারা বলেন, আমরা সীমান্তে হাতি
অবাধে চলে আসার বিষয়টির
স্থায়ী সমাধান চাই। হাতির সঙ্গে
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর যুদ্ধ
চাই না। এ বিষয়ে
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. সুরুজ মিয়া
বলেন, পরিষদের তহবিল থেকে কেরোসিন, টর্চলাইন
ও পটকা সরবরাহ অব্যাহত
রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়দের নিয়ে হাতি তাড়াতে
গ্রাামে টিম করে দেয়া
হয়েছে। তবে একটি স্থায়ী
সমাধান প্রয়োজন, যাতে কৃষকরা আর
ক্ষতির মুখে না পড়ে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর
রহমান বলেন, অন্তত ৪০ একর জমির
ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত
কৃষকদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ
বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, প্রতি
বছরের চাইতে এ বছর হাতির
অত্যাচার বেশি। এতে কৃষকদের ক্ষতিও
বেশি হচ্ছে। এমন অবস্থা থেকে
উত্তরণের জন্য স্থানীয় যুবকদের
দিয়ে ‘হাতি প্রতিরোধ টিম’
গঠন করা হয়েছে।হাতি তাড়াতে
প্রয়োজনীয় টর্চলাইট, লাঠি, মশাল, পটকা ও বাঁশি
দেয়া হয়েছে। এগুলো নিয়ে রাত জেগে
কৃষকরা পাহাড়া দেয় এবং মশাল
জালিয়ে, পটকা ফুটিয়ে, বাশি
বাজিয়ে হাতি রাতভর হাতি
তাড়ায়। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের
ক্ষতিপুরণ দেয়া হবে।
ইউএনও
আরও বলেন, এ বছর হাতির
তাণ্ডব বেশি হওয়ার কারণ
হলো, রাত হলে ভারতীয়
সিমান্তবর্তী এলাকায় হাতি বেশি তাণ্ডব
চালালে বিএসএফ রাতে সিমান্ত গেইট
খুলে দেয়। এতে বাংলাদেশে
সিমান্তের কিছুটা এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায়
অবাধে হাতির পাল নেমে এসে
কৃষকের ফসল নষ্ট করে।
বিষয়টি বিজিবি এবং বনবিভাগ তাদের
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।