ভোলার চরফ্যাশনে গ্রামগঞ্জে সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা করে ১ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে ‘সকস বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিও।
মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ঋণগ্রহীতা গ্রাহকরা ঋণ নিতে এসে চরফ্যাশন শরীফপাড়া এনজিওর অফিস তালাবন্ধ দেখেন। এ সময় হতাশায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী গ্রাহকরা থানায় অবস্থান নেন। ভুয়া এনজিওর খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলার ১ হাজার ঋণপ্রত্যাশী অসহায় মানুষ। পরে নিরুপায় হয়ে তিনি এবং অপর ভুক্তভোগী নারী পুরুষরা স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানান।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক মাস ধরে 'সকস বাংলাদেশ' নামে একটি ভুয়া এনজিওর কয়েকজন মাঠকর্মী ঋণ দেওয়ার নামে পৌর সদরসহ চারটি ইউনিয়নে প্রচারণা শুরু করে। তারা আগ্রহী গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম সঞ্চয় বাবদ ১০ হাজার ২০০ টাকা করে উত্তোলন করে। তাদের অফিসে কর্মী নিয়োগের জন্য চারজনের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা নেয়।
গত শুক্রবার সদরের শরীফপাড়ার একটি বাসায় প্রত্যেক ওয়ার্ডের ১০ সদস্য নিয়ে গঠন করা কেন্দ্র প্রধানদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস উদ্বোধন করে মঙ্গলবার ঋণ দেওয়ার দিন ধার্য করেন। পরে মঙ্গলবার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা ঋণগ্রহীতারা এনজিওর দেওয়া ঠিকানামতে অফিসে এলে দেখেন- ঘরটি তালাবদ্ধ, নেই কোনো সাইনবোর্ড। অফিসের সামনে পূর্বের দেওয়া সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলে পালিয়ে গেছে ওই এনজিওর কর্মীরা।
পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী নারী শাহানুর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘সকস বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজির দুইজন মাঠকর্মী তাদের বাড়িতে যান। জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে ঋণ দেবেন- এমন অজুহাতে ওই গ্রামে একটি কেন্দ্রে ১০ জন সদস্য সংগ্রহ করেন। সদস্যপ্রতি অগ্রিম সঞ্চয় হিসেবে ১০ হাজার টাকা এবং সদস্য ফি বাবদ ২০০ টাকা করে উত্তোলন করেন। গ্রাম থেকে সুদে ১০ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে এনজিও কর্মীদের অগ্রিম সঞ্চয়ের টাকা পরিশোধ করেন তিনি।
মঙ্গলবার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিস ঘরটি তালাবন্ধ। নেই কোনো সাইনবোর্ড, কর্মীদের মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রেখেছেন।
উত্তর মাদ্রাজ গ্রামের মিনারা বেগম জানান, ওই এনজিও কর্মীরা তার ছেলে আসিফকে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দেবেন বলে তার কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। ছেলের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে তার দিনমজুর স্বামী একটি গাভী গরু বিক্রি করে তাদের ৩০ হাজার টাকা দেন। ছেলের চাকরি তো দূরের কথা অফিসে এসে দেখেন ওই টাকা হাতিয়ে নিয়ে এনজিও কর্মীরা পালিয়েছে।
চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মনির হোসেন মিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীরা সকালে থানায় এসে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।