রাজশাহীতে সাতটি বিদেশি পিস্তল এবং রিভলবার, তাজা গুলি, গানপাউডার ও হাতবোমা তৈরির সরঞ্জামসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গেছে।
র্যাব-৫ রাজশাহীর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের একটি দল শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালি থানার কাপাশিয়া পাহাড়পুর এলাকায় এ অভিযান চালায়।
গ্রেফতার তিনজন হলেন- কাপাশিয়া পাহাড়পুর গ্রামের অস্ত্র ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান ওরফে আতিক (৩৫), রাজশাহী মহানগরীর চারকাজলা এলাকার শাহীন আলী (২৫) এবং পার্শ্ববর্তী ধরমপুর পূর্বপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মো. শহিদুল (২৬)। এছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তানজিম (২৭) এবং রহিম (২৮) নামের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী জড়িত।
তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্রের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র এবং বোমার তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ আগ্নেয়াস্ত্র এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম দিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এটি উত্তরাঞ্চলে আগ্নেয়াস্ত্রের বড় চালান বলে র্যাব জানিয়েছে।
এদের কাছ থেকে ৪টি বিদেশি রিভলবার, ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৪টি ম্যাগাজিন, ৮ রাউন্ড তাজা গুলি ও ৪ রাউন্ড গুলির খোসা, গানপাউডার উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত এক কেজি ১০০ গ্রাম গানপাউডার, ৭৫০ গ্রাম পাথর, স্প্লিন্টার হিসেবে ব্যবহৃত লোহার বল ও তারকাঁটা উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দুপুরে নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার। তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন রাজশাহীতে একটি বড় অস্ত্রের চালান সীমান্তবর্তী চর এলাকা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় এসেছে। এ তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় র্যাব সদস্যরা কাপাশিয়া পাহাড়পুর এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী দলের সক্রিয় সদস্য অস্ত্র ব্যবসায়ী আতিকের বাড়িতে অভিযান চালান। এ সময় আতিককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর একপর্যায়ে আতিক তার মুরগির খামারের পাশের একটি ছোট ঘর থেকে অবৈধ অস্ত্রগুলো বের করে দেন। এ ছাড়া তিনি হাতবোমা তৈরির সরঞ্জামগুলোও বের করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অন্য দুইজন অস্ত্র ব্যবসায়ী আতিকের সহযোগী।
র্যাব অধিনায়ক জানান, গ্রেফতার তিনজন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তানজিম (২৭) ও আব্দুর রহিম (২৮) নামের ২ জনের মাধ্যমে অস্ত্র-গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি সংগ্রহ করেছিলেন। তারা এগুলো স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তাদের কর্তাদের কাছে পৌঁছাতেন। এদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজশাহী তথা বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা। এছাড়া সামনে নির্বাচনকে লক্ষ্য করে তারা রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির বড় ধরনের পরিকল্পনা করছিলেন।
লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, সাম্প্রতিককালে উত্তরবঙ্গে এটিই অবৈধ অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান। অস্ত্রগুলো সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে এসেছে। গ্রেফতারকৃত তিনজনের মধ্যে আতিক চিহ্নিত শীর্ষ অস্ত্র ব্যবসায়ী। এদের বিরুদ্ধে রাজশাহীর কাটাখালি আর এ অস্ত্রগুলো আনার ক্ষেত্রে তানজিম ও রহিম নামে দুই ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে। মোট ১০টি পিস্তল ও রিভলবার আনা হয়েছিল। এর মধ্যে সাতটি উদ্ধার হয়েছে। বাকি তিনটি তানজিম ও রহিমের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ ঘটনায় কাটাখালি থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া এ মামলার অন্য আসামিদেরও আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।