কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন।
বুধবার (৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা ১৪ মিনিট ও ১টা ২১ মিনিটে নিজ ফেসবুক পেজে থেকে জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কর্মকাণ্ড নিয়ে দুটি পোস্ট দেন এমপি লিপি। যেখানে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ বলে অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়াও নবগঠিত হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমটিতে অছাত্র, বিবাহিত, বয়স্ক ও বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন।
ছাত্রলীগকে নিয়ে দেওয়া এমপি লিপির দুটি ফেসবুক পোস্ট ইতোমধ্যে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের তিন সদস্যের একটি কমিটি এক বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। কমিটিতে সভাপতি করা হয় আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনকে, সাধারণ সম্পাদক করা হয় মোহাম্মদ ফয়েজ ওমান খানকে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় লুৎফর রহমান নয়নকে। এরা তিনজনই তিন মেরুর বাসিন্দা। কমিটি হওয়ার পর থেকে এ যাবৎকালে তিনজনে মিলিত হয়ে কোনো দলীয় অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করতে পারেননি। যাদিও মাঝে মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে কিছু অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করেছেন।
তিন সদস্যের কমিটির বয়স তিন বছর হতে চললেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। গঠন হয়নি উপজেলা ও ক্যাম্পাস কমিটি। এনিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে হতাশা কাজ করছে। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাবি তাদের কমিটি হওয়ার পর থেকে দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। তাই তাদের কার্যক্রমেও স্থবিরতা সৃষ্টি হয়।
তবে সেই কমিটি এবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বুধবার (৫ অক্টোবর) জেলার হোসেনপুর উপজেলায় ২৯ সদস্যের ছাত্রলীগ কমিটির ঘোষণা দিয়ে। সেই কমিটিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।
তিনি তার ফেসবুক (Dr. Sayeda Zakia Noor Lipi, MP) পেজে বুধবার দিবাগত রাত ১টা ২১ মিনিটে লেখেন, ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী, প্রয়াত জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একাধিক মেয়াদে নির্বাচনী এলাকা তথা বর্তমানে আমার নির্বাচনী এলাকাধীন হোসেনপুর উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। যা সম্পর্কে আমি অবহিত নই। অছাত্র, বিবাহিত, বয়স উত্তীর্ণ ও বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বার বার বলার পরও কেন বা কি কারণে সমন্বয় না করেই মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা কমিটি কর্তৃক এমন একটি বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করা হল? আমরা কি এমন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চেয়েছিলাম?
বিঃদ্রঃ মেয়াদ উত্তীর্ণ ও বিতর্কিত কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ও নবগঠিত হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
এর আগে তিনি রাত ১টা ১৪ মিনিটে লেখেন, ‘এই লেখাটি বার বার তাদের কাছে পাঠিয়েছি। আমরা কি এই ছাত্রলীগ চেয়েছিলাম? যারা কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না। কিসের লোভে। এখন জানার সময় হয়েছে।
স্নেহের ভাই জয় ও লেখক, শুভেচ্ছা নিও।
শ্রদ্ধেয় বড় আপা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শ্রদ্ধেয় ছোট আপা শেখ রেহেনা আপার আন্তরিকতায় আমি কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) সংসদীয় আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকাধীন কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি আমার কনসার্ন নিয়ে যেন হয় সে বিষয়ে সতর্ক খেয়াল রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিও। উল্লেখ্য তোমরা দুজনে আমাকে কথা দিয়েছিলে সদর ও হোসেনপুরের কমিটি আমার মত করে দেবে। এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকও আমাকে অনুরূপ কথাই দিয়েছিল।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা ও প্রয়াত জননেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন হিসেবে আশা করি এ ব্যাপারে তোমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।’
প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার (৫ অক্টোবর) দিবাগত রাতে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বছরের জন্য হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ দুই উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে ফেসবুকে পক্ষে বিপক্ষে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে।