ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪ |

EN

সংসদ সদস্য রতনের আপত্তি থাকায় জালধরা জলমহালটি ইজারা দিতে পারছে না প্রশাসন

ধর্মপাশা প্রতিনিধি | আপডেট: বুধবার, অক্টোবর ৫, ২০২২

সংসদ সদস্য রতনের আপত্তি থাকায় জালধরা জলমহালটি ইজারা দিতে পারছে না প্রশাসন
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জালধরা জলমহালটি সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নানা আপত্তির মুখে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি এটি ইজারা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ০৪-১০-২০২২ ইং মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় তিনি এই জলমহালটি ইজারা না দিয়ে খাসকালেকশনের মাধ্যমে আদায়ের জন্য তিনি ইউএনএর কাছে প্রস্তাব করায় এটির ইজারা দিতে পারেনি প্রশাসন। ১৪২৯বঙ্গাব্দের সাড়ে পাঁচমাস পেরিয়ে গেলেও এই জলমহালটির ইজারা না পাওয়ায় জলমহালটির তীরবর্তী উপজেলার দক্ষিণ সলপ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সদস্যদের ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। নীতিমালা অনুযায়ী চলতি বঙ্গাব্দের ১বৈশাখের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন জলমহালের ইজারা প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা ছিল।

ধর্মপাশা উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৪২৯-১৪৩১ বাংলা সনের জন্য ২০একরের নীচে উপজেলার নয়টি জলমহাল ইজারা দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে তীরবর্তী সমিতি হিসেবে উপজেলার দক্ষিণ সলপ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির পক্ষে সমিতির সম্পাদক সৈয়দ সবুজ আবেদন করেন। পরবর্তীতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সিনিয়র  উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্তক্রমে গত ২৮ এপ্রিল জলমহাল ইজারা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে দক্ষিণ সলপ মৎস্যজীবি সমিতির বিষয়ে প্রতিবেদন দেন। গত ৪ আগস্ট উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় উপজেলার ২০একরের নীচে বিজ্ঞপ্তি হওয়া নয়টি জলমহালের মধ্যে ছয়টি জলমহাল ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েকজন সদস্য  সভায় নানা আপত্তি তুলে উপজেলার জালধরা জলমহাল, বারিয়া নদী জলমহাল ও কোদালিয়া পেকুয়া দেবুয়ার খাল জলমহালের বিষয়ে পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সালমুন হাসান বিপ্লব পুনঃতদন্তে উপজেলার দক্ষিণ সলপ মৎস্যজীবি সমিতিটি যোগ্য ও তীরবর্তী সমিতি হিসেবে ইজারা পাওয়ার যোগ্য মর্মে ১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হওয়ার কথা ছিল গত ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্ত স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে  সভায় উপস্থিত থাকার ইচ্ছে পোষন করলে ওই সভাটি স্থগিত করা হয়। গত মঙ্গলবার (৪অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় মিলনায়তনে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন উপস্থিত হন। তিনি সভার শুরুতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে জালধরা জলমহালটি ইজারা না দিয়ে খাস কালেকশনের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য   ইউএনওর কাছে প্রস্তাব দেন। এতে ইউএনও অসম্মতি জানালে সংসদ সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এ নিয়ে মুঠোফোনে  কথা বলেন। পরে জলমহালটির ব্যপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

দক্ষিণ সলপ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সম্পাদক সৈয়দ সবুজ বলেন, আমাদের সমিতিটি জালধরা জলমহালটির তীরবর্তী যোগ্য সমিতি। ১৪২৩থেকে ১৪২৮বঙ্গাব্দ পর্যন্ত  দুই মেয়াদে টানা ছয় বছর বৈধভাবে জলমহালটি আমরা ইজারা পেয়ে ইজারামুল্যহ যাবতীয় পাওনাদি  পরিশোধ সাপেক্ষে এটি ভোগ দখল করেছি। ওই সময়কালে ওই সদস্য সংসদ্য মহেদয়ই উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। এখনো  তিনিই প্রধান উপদেষ্টা পদে রয়েছেন। কিন্তু এবার সংসদ সদস্য অনৈতিকভাবে  ক্ষমতার প্রভাব খাটাচ্ছেন। তিনি আইনকানুনের তোযাক্কা না করা জালধরা জলমহালটি আমাদেরকে ইজারা না দিয়ে এটি উনার লোকজনকে খাসকালেকশনে  দেওয়ার জন্য অপচেষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছেন। বছরের সাড়ে পাঁচমাস পার হলেও এখনো জলমহালটির ইজারা কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের সমিতির সদস্যরা পরিবার পরিজন নিয়ে নানা সমস্যা নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তিনি আরও  বলেন, জলমহালটি অরক্ষিত থাকায় একটি প্রভাবশালী মহলের নির্দেশে এটি থেকে নিষিদ্ধ মশারী ও কারেন্ট জাল  অবাধে মা ও পোনা মাছ নিধন করা হচ্ছে। সরকারকেও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. মুনতাসির হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি নীতিমালা অনুযায়ী জলমহালটি ইজারা দেওযার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।  কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের নানা আপত্তির মুখে এটি ইজারা দেওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে পরবর্তী  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠানোর হবে।

স্থানীয় সংসদ  মোয়াজ্জেম হোসেন রতন সাংবাদিকদের বলেছেন, জালধরা জলমহালটি নিয়ে দুইপক্ষ মারমূখী অবস্থানে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সে জন্য তিনি দুইপক্ষকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্ঠা করছেন। এতে তাঁর ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই।তাঁকে নিয়ে নানান মিথ্যা কথা রটানো হচ্ছে।