জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৫, ২০২১
সুগন্ধা নদীর অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে ‘নলছিটি-দপদপিয়া সড়ক’। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বরিশালে যাওয়ার একমাত্র সড়ক। সড়কটি যে কোন সময়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে হয়ে যেতে পারে।
সারা বছর ভাঙনের পালা থাকলেও বর্ষায় তা ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে। নলছিটি শহর থেকে পূর্ব দিকে মল্লিকপুর থেকে শুরু করে খোজাখালি পর্যন্ত সড়ক থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র ৫-১০ ফুট। প্রতিদিন বিশাল বিশাল মাটির খণ্ড নদীতে ভেঙে পরছে। সুগন্ধার ভাঙনে ইতিমধ্যে এই এলাকার অনেক মানুষজন নদীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন।
এমনই একজন হলেন নলছিটি শহরের ব্যবসায়ী ইউনুচ বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমাদের প্রথম বসতবাড়ি ছিল পৌর এলাকার খোজাখালি গ্রামে কিন্তু সেখানের কোনকিছুই এখন আর নেই। সবই নদীগর্ভে। আমাদের বসতবাড়ির সেই জায়গায় এখন কয়েকশ হাত পানি। এরপর আমরা একটু এগিয়ে সারদল গ্রামে পশ্চিম অংশে নতুন ঘর নির্মাণ করি। সেখানেও ইতোমধ্যে ভাঙনে আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশের কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদী বসতঘরের একদম কাছে চলে এসেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে আছি। বর্ষায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এখান থেকেও সবকিছু নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।
সারদল গ্রামের বাসিন্দা মো. কামাল মৃধা বলেন, আমাদের নলছিটি শহরে বিভিন্ন কাজের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য বার যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যানবাহন এই সড়ক দিয়েই চলাচল করে। যদি সড়কটি হারিয়ে যায়, আমাদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। এ বিষয়ে আমরা ঝালকাঠি-২ আসনের সাংসদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু'র দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
জানা গেছে, নলছিটি-দপদপিয়া সড়কটির মোট দূরত্ব ১০ কিলোমিটার তার মধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ন মল্লিকপুর থেকে খোজাখালি। এই অংশের দূরত্ব আনুমানিক এক কিলোমিটার হবে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের উন্নয়ন করা হচ্ছে, যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে সড়কটি দুই পাশে ৩ফুট করে চওড়া করা হয়েছে তাই বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানে সড়কটি এই অঞ্চলের মানুষদের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এছাড়া নলছিটি শহর থেকে শুরু করে তার আশেপাশের ইউনিয়ন সমূহের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন তাদের পণ্য এই সড়ক দিয়েই পরিবহন করেন। তাদের দাবি, ভাঙন রোধে যেন এখনই কার্যকরই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
স্থানীয় নুরুল ইসলাম স্বপন বলেন, সুগন্ধা নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা শুনেছিলাম তবে তার কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। যদি প্রকল্পটি দ্রুত পাশ হতো তাহলে এখানের মানুষের দূর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হতো।
তিনি বলেন, সুগন্ধা নদী এই অংশে ইউ আকৃতির হওয়ার কারণেই এখানে নদী ভাঙন তীব্র। প্রবল স্রোতের চাপে নদীর নিচের মাটি সরে গিয়ে উপরের মাটি ভেঙে পরছে। যদি নদীর নিচের অংশে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে শক্ত বাঁধ দেওয়া হয় তাহলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবরে আমাদের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা আছে। সেই প্রকল্প গৃহীত হলে নদী ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে।