বলিউড সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসা সফল সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টসে’র ‘মিলিমিটার’কে মনে আছে? ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চত্বরে পা দিতেই ছাত্রদের ফাইফরমাশ খাটা যে কিশোর তাদের হোস্টেলের আদব কায়দার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, সেই কিশোর এখন ২৭ বছরের প্রাপ্তবয়স্ক। ‘মিলিমিটার’এর চরিত্রে অভিনয় করেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছিলেন রাহুল শর্মা।
‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান রাহুল। ওই সিনেমায় তার অভিনয় দর্শকদের এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে, একের পর এক সিনেমা-ধারাবাহিকে কাজ পেতে শুরু করেন তিনি।
রাহুল ১৯৯৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সুরেশ কুমার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। মা গীতা রূপটান শিল্পী।
মাত্র তিন বছর বয়সে অভিনয়ে হাতেখড়ি রাহুলের। ওই বয়স থেকেই থিয়েটারে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি।
পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ যখন রাস্কিন বন্ডের লেখা গল্পানুসারে ‘দ্য ব্লু আমব্রেলা’ সিনেমা বানাচ্ছিলেন, তখন ‘টিক্কু’ নামক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য একজন শিশুশিল্পীর খোঁজ চলছিল।
এ চরিত্রে অভিনয় করার জন্য অডিশন দিতে রাহুল মুম্বাই আসেন। অডিশনের সময় রাহুলের অভিনয় ভালো লেগে যায় কাস্টিং ডিরেক্টরের। সিনেমায় পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নেন রাহুল।
তবে ‘দ্য ব্লু আমব্রেলা’ রাহুলের প্রথম সিনেমা ছিল না। ১৯৯৯ সালে কম বাজেটের হিন্দি সিনেমা ‘চন্ডাল আত্মা’-তে শিশু অভিনেতা হিসেবে কাজ করেন তিনি।
‘দ্য ব্লু আমব্রেলা’র পর বিশালের আরও এক সিনেমায় অভিনয় করেন রাহুল। বিশাল পরিচালিত ‘ওমকারা’ সিনেমায় ‘ল্যাংড়া ত্যাগী’ চরিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করা সাইফ আলি খানের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি।
‘ওমকারা’ সিনেমায় অভিনয়ের পর একাধিক ধারাবাহিকে ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ আসে রাহুলের। ‘ওমকারা’ মুক্তির প্রায় তিন বছর পর থ্রি ইডিয়টস সিনেমার ‘মিলিমিটার’ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান রাহুল। আগের দুই সিনেমায় ভাল অভিনয় করলেও রাহুলের ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে থ্রি ইডিয়টসে অভিনয় করার পরই।
রাহুল পরিবারে খুব একটা বেশি আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না। তাই দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক করেন টাকা উপার্জন করার জন্য শুধু মাত্র অভিনয়েই মনোনিবেশ করবেন।
এই খবর ‘থ্রি ইডিয়টস্’-এর প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়ার কানে গেলে তিনি রাহুলকে পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বোঝান। এমনকি রাহুলের পড়াশোনার খরচের ভারও নেন বিধু। এর পর পড়াশোনার প্রতি আলাদা আকর্ষণ তৈরি হয় রাহুলের। এমনকি এক সময়ে, পড়াশোনার জন্য ধারাবাহিকের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন তিনি।
সিনেমা-ধারাবাহিক ছাড়া একাধিক বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন রাহুল। অমিতাভ-বচ্চন থেকে শুরু করে শাহরুখ খান, বলিউডের প্রায় সব বড় অভিনেতাদের সঙ্গেই তিনি পর্দা ভাগ করার সুযোগ পেয়েছেন।
রাহুল ২০১২ সালে ‘জিনা হ্যায় তো ঠোক ডালে’ নামে এক বলিউড সিনেমায় ‘বিটওয়া’র চরিত্রে অভিনয় করেন। এই সিনেমা বক্স-অফিসে মুখ থুবড়ে পড়লেও ‘মেক্সিকো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ বিদেশি ভাষায় সেরা সিনেমার তকমা জোটে এই সিনেমার কপালে।
সূত্র: আনন্দবাজার