কেনো প্রতিবন্ধী সমাজের অভিশাপ নয় বরং আশীর্বাদ।পরের উপর বোঝা নয়, নিজ কর্মে আয় উপার্জন করে বেঁচে থাকতে চান সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের মাকরদী গ্রামের প্রতিবন্ধী স্বদেশ সরকার। অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বংশীকুন্ডা বাজারে ক্ষুদ্র ফলের ব্যবসা করে প্রতিবন্ধী স্ত্রী-সন্তান ও মাকে নিয়ে পরিবারে ভরণ পোষণ চালাচ্ছে সে।
ইদানিং পরিবারের খরচ ও অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে এখন হিমশিম খাচ্ছে স্বদেশ। ফলে বহু টাকার দেনাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সে। তবে বংশীকুন্ডা বাজারের ফুটপাতের গলির পাশে কোনো রকমে ফসরা সাজিয়ে চলছে তার ক্ষুদ্র ফলের ব্যবসা।
অনান্য আট-দশটা স্বাভাবিক শিশুর মতোই জন্মগ্রহণ করেছিল স্বদেশ । স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে সে। তার বয়স যখন ৭ বছর তখন হঠাৎ করে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত। কিছুদিন ভোগার পর চিকিৎসার অভাবে তার দু'পা বিকল হয়ে যায় ।
অন্য শিশুদের দুরন্তপনা দৌড়াদৌড়ি দেখে তার মনেও আকাশ সমান স্বপ্ন ছিল। বিধিবাম বহু চিকিৎসা করেও তার দু পা স্বাভাবিক হয়নি। সেই থেকে ধীরে ধীরে দু’পা বিকল।কত ডাক্তার , কবিরাজ চিকিৎসা করেও কোন ফল হয়নি। তার শরীরে আকৃতি পরিবর্তন হয়ে ৪২ বছরে তার শরীর বেড়েছে মাত্র ২১ ইঞ্চি।
শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বদেশ নিজে বসে বসে ক্রেতার হাতে মেপে মেপে পণ্য তুলে দিচ্ছেন, থেমে নেই তার জীবন। ক্রেতারাও তাকে সহযোগিতা করছেন নিজেদের সাধ্যমতো। দাম পরিশোধ করে নিজের ক্রয়করা মালামাল নিজেই তুলে নিচ্ছেন দোকান থেকে। এভাবেই প্রতিদিন যুদ্ধ করে চলছেন নিজের নিয়তির সাথে।
আত্মনির্ভরশীল এই প্রতিবন্ধী স্বদেশ সরকার বলেন,বর্তমানে আমার পরিবারের স্ত্রী, সন্তান ও মা আছেন।আমার এই ক্ষুদ্র ফলের ব্যবসার মাধ্যমে যে আয় হয় তা দিয়েই আমার সংসার চলে।আমার থাকার মতো কোনো ঘর নেই।বাজারের পাশে একটি বাসা ভাড়া করে পরিবার নিয়ে থাকছি।আমি এবং আমার স্ত্রী প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছি। তবে সরকার যদি আমাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে আমি স্ত্রী সন্তান ও মাকে নিয়ে মাথা গুজার একটু ঠাঁই পেতাম।
স্বদেশ সরকারের স্ত্রী প্রতিবন্ধী শিলা সরকার বলেন,আমার স্বামী একজন প্রতিবন্ধী হয়েও আত্ননির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুদ্র ফলের ব্যবসা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।আমাদের একটি ছেলে রয়েছে। তাকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলাই আমাদের স্বপ্ন।
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, স্বদেশ শিলা দম্পতি দুজনেই শারীরিক প্রতিবন্ধী।শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কে জয় করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগের মাধ্যমে বংশীকুন্ডা বাজারে একটি ফলের ব্যবসা করছে।তার বর্তমানে একটি বাসস্থানের সংকট রয়েছে। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তার একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করব।অনান্য যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী আছেন তাদের কে একটি কথাই বলব আপনারা স্বদেশ কে অনুকরণ করুন।তার মতো প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুন।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন,স্বদেশ যেভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করছে তার এই উদ্যোগ কে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই। যেহুতু তারা গৃহহীন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের কে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।