আর মাত্র কয়েক দিন তার পরেই শুরু হবে সনাতন ধর্মালম্বিদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এরোই মধ্যে মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর কাজে চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। বৈচিত্র শৈল্পিক নকশা কারুকার্য ও আলোক সজ্জায় থাকছে প্রতিযোগীতার অভাস। পূজা কে উৎসবমূখর ও নিবির্ঘ করতে প্রশাসন ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। বর্তমান সময়ে প্রতিমার গায়ে শৈল্পিক নির্দশন ও রং তুলি তুলিতে পূণাঙ্গ রূপ দিচ্ছে কারিগররা।
শিল্পীর আপন হাতের ছোয়ায় একটু করে ফুটে উঠছে দেবী দূর্গা। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে দূর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। দম ফেলার যেন ফুসরত নেই প্রতিমা তৈরীর কারিগরদের। কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরীর কাজ এখন শেষের দিকে। অনেক জায়গাতে আবার রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমা কে দিচ্ছে দৃষ্টিনন্দন রূপ। ধরণীর শক্ত মাটি নরম করে দেবী দুর্গার সাথে গড়ে তুলছেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষী আর সরস্বতীর মূর্তি। এবছর সারাদেশের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা পূজার সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয়। প্রতিমা তৈরী শেষে এখ চলছে রং তুলির কাজ।
জেলায় এবছর ১২টি উপজেলায় এক হাজার ২৮৪টি পূজামন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ধনবাড়ী উপজেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩৪ টি মন্ডপে বসবে ৩৩ টি প্রতিমা। গতবছর করোনার কারণে পূজার সংখ্যা কম থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছিলো কারিগররা। কিন্তু এবছর পূজার সংখ্যা বেশী থাকায় মজুরীও পাচ্ছেন বেশী বলে জানান কারিগররা।
পঞ্জিকা মতে ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে মর্ত্যলোকে দেবীর আগমনী বার্তা বেজে উঠছে। আর ৫ অক্টোবর দশমী বিহীত পূজা ও দশহারার মধ্যে দিয়ে ঘটবে এ পূজার সমাপ্তি। গেল বছর করোনার কারণে পূজা কম থাকলেও এ বছর জেলায় পূজার সংখ্যা বেড়েছে। তবে বিগত দিনগুলোর মত এবারো শান্তি পূর্ণভাবে উদযাপিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব বলে প্রত্যাশা করছেন আয়োজকরা।
ধনবাড়ী মাদক মুক্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপু ভদ্র জানান, প্রতিক্ষার ১ বছর পরে আরো শুরু হচ্ছে দূর্গাপূজা। দূর্গাপূজা উৎসব কে ঘিরে আনন্দিত শিশু-কিশোর সহ সকল বয়সীরা। বড়দের মত তারাও নেচে গেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্তি করতে চান এরই দূর্গোৎসব। তবে এবছর সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য সকল ধরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে আমরা আয়োজক সহ সকলেই খুশি।
ধনবাড়ী পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মদন কুমার দাস জানান, এবছর ধনবাড়ী উপজেলায় খবুই আনন্দমূখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করা হবে। গত বছর করোনার কারণে পূজার সংখ্যা ছিলো কম। তবে এবার তুলনামূক ভাবে বেশী। আমরা খুবই শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের উৎসব পালন করতে চাই। এজন্য প্রশাসন ব্যাপক নিরাপত্তার জোরদার করেছেন।
ধনবাড়ী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তাপন কুমার দেব জানান, ধনবাড়ী উপজেলার পৌরসভা সহ ৭ টি ইউনিয়নে মোট ৩৩ টি শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নিরাপদে পূজা উদযাপনে প্রত্যেক পূজা মন্ডপের কমিটির নেৃবৃন্দদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। এছাড়াও শান্তিপূর্ণভাবে দূর্গা পূজা উৎসব সমাপ্তি করতে সকল ধরণের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে পূজা উদযাপন পরিষদ।
ধনবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. চাঁন মিয়া জানান, পূজাকে কেন্দ্র করে পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েক দফা সমন্বয় সভা করেছে উপজেলা ও থানা প্রশাসন। প্রশাসন থেকে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্যও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে সকল প্রকার ঝুঁকি মাথায় রেখেই জোরদার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান ।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আসলাম হোসাইন জানান, দুর্গা পূজা উৎসবকে আনন্দমুখর করে তুলতে সরকারিভাবে সব রকমের সহযোগিতা করা হচ্ছে । শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সকলের সার্বিক সহযোগীতায় নির্বিঘেœ পূজার পরিসমাপ্তি করা হবে।
দশভুজা দেবী দূর্গা এবার আসছে ঘোড়ায় চড়ে। আর ফিরবেন নৌকায়। শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসবমূখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে বলে আশা করছেন ধর্মালম্বিরা।