হবিগঞ্জের বাহুবলে নির্মাণের প্রায় ৮ বছর পর অবশেষে স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর হচ্ছে ট্রমা সেন্টার। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ নিয়ে গণপূর্ত ও স্বাস্থ্য বিভাগের ঠেলাঠেলিতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হওয়ায় অনেক অবকাঠামোই নষ্ট হয়ে গেছে। হস্তান্তরকে সামনে রেখে অবকাঠামোগত সংষ্কার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে গণপূর্ত বিভাগ। ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকায় নির্মিত ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণ কাজ বিগত ২০১৩ সালে সম্পন্ন হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের উন্নত ও দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের জন্য ২০১০ সালে ফিজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ট্রমা সেন্টার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ১০ শয্যার ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৩ সালে। এতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভবনটি গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দেয় গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ না থাকায় সেটি গ্রহণ করতে রাজি হয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে দু'বিভাগের বেশ কয়েকবার চিঠি চালাচালিতেই কেটে গেছে ৮ বছর।এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে গণপূর্ত বিভাগ একটু সরব হয়। কিছুদিন পর তা আবার ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে।
গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের অগ্রগতি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পল্লী বিদ্যুতের ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ২০১৪ সালের ২৬শে মে ও ২০১৫ সালের ২৯শে জানুয়ারি তাগিদপত্র দেয়া হয়। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অতিরিক্ত ৬ লাখ টাকা দাবি করায় হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। অন্যদিকে, ২০১৩ সালের ২৩শে জুন গ্যাস সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট চেয়ে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিকে চিঠি দেন। এরপর এ সংক্রান্ত কোনো খোঁজখবর না রাখায় ইতিমধ্যে সরকার সারা দেশে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে ট্রমা সেন্টারে গ্যাস সংযোগ অনিশ্চয়তার মূখে পড়ে। জেলার মাধবপুর উপজেলা থেকে নবীগঞ্জ উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার জুড়ে মহাসড়ক রয়েছে। আর এ মহাসড়কে প্রায়শই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় আহতদের প্রতিনিয়ত সিলেট অথবা ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু অনেকের পক্ষেই টাকা-পয়সার অভাবে ঢাকা-সিলেট নিয়ে দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেকেই যথাযথ চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। বাহুবলে ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে এসব রোগী হাতের কাছে চিকিৎসা সেবা পাবে বলেই স্থানীয় লোকজন মনে করেন।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূরুল হক জানান, তৎকালীন সময়ে অনেক কাজ বাকি রেখেই সেটি হবিগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ বাকি থাকায় তখন তা গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বাবুল কুমার দাস জানান, ট্রমা সেন্টারের কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন করে গণপূর্ত বিভাগ আমাদেরকে হস্তান্তর করলে আমরা পরবর্তী কার্জক্রম শুরু করবো। হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন জানান, অবকাঠামোগত সংস্কার কাজ শেষের পথে। আগামী সপ্তাহেই ট্রমা সেন্টারটি হবিগঞ্জ সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।