ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

দুর্গাপূজার আগমনে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত পিরোজপুরের মৃৎশিল্পীরা

শাফিউল মিল্লাত, পিরোজপুর প্রতিনিধি | আপডেট: শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২

দুর্গাপূজার আগমনে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত পিরোজপুরের মৃৎশিল্পীরা
আকাশে সারি সারি সাদা মেঘ, দিগন্ত জোড়া কাশফুল আর ভাদ্র শেষে আশ্বিনে বাজনা বাজিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা দিচ্ছে। কৈলাশ থেকে দেবী দুর্গা গজে চড়ে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক আর গণেশকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন মর্ত্যলােকে।

আগামী ১ অক্টোবর ৫ দিনব্যাপী ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ পূজা উপলক্ষে প্রতিমা তৈরি করতে ব্যাস্ত সময় পার করছে পিরোজপুরের মৃৎশিল্পীরা। শিল্পীরা নিপুণ হাতে দেবী দুর্গাসহ সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, অসুর, সিংহ, হাস, পেঁচাসহ বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি করছে।

এবছর পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় সব থেকে বেশি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। আর সব মিলিয়ে জেলার সাত উপজেলায় ৫৭৮ টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ জাহেদুর রহমান।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে পিরোজপুর সদর উপজেলার কালীবাড়ি, আখড়াবাড়ী, রায়েরকাঠী, কৃষ্ণনগর, রাজারহাট এবং পালপাড়াসহ বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা যায়, মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক শ্রদ্ধায় তিলতিল করে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। শক্ত মাটি নরম করে দেবী দুর্গার সঙ্গে গড়ে তুলছেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি। খুব সকালে কাজ শুরু হয়ে চলছে গভীর রাত পর্যন্ত। তাই অনেক সময় তারা পর্যাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিমা তৈরীর এই কাজ শুরু হয় এক মাস আগে। এখন চলছে পরিপাটি করে প্রতিমাগুলোর সাজ সজ্জার কাজ।

সদর উপজেলার পালপাড়ার মৃৎশিল্পী পরিমল পাল বলেন, বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি। এ বছরের পূজায় ৪০ টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। আঁকার ভেদে প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে এবছর এ টাকায় আমাদের পোষাবে না। কারণ প্রয়োজনীয় উপকরণের মধ্যে রঙ, কাপড়, পুঁথির মালা, পরচুলা, চুমকি, শোলা ও কারিগরের মজুরিসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। শুধু পেশাটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এ কাজ করতে হচ্ছে।

পরিমল পালের ছেলে অমিত পাল বলেন, একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে ৪ থেকে ৫ জন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন। প্রতিমা তৈরির জন্য লাগে মাটি, খড়, কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা, ধানের তুষ ও কয়েক ধরনের রং। আমাদের এখানের প্রতিমা গুলোর কাজ প্রায় শেষ এখন শুধু রং তুলিতে সাজসজ্জার কাজ টুকু বাকি।

একই এলাকার প্রতিমা শিল্পী বিশ্ব পাল বলেন, জিনিসপত্রের দাম হিসাবে প্রতিমা তৈরীর মজুরি অনেক কম। এ বছর প্রতিমা তৈরি করে লাভের মুখ দেখতে কষ্ট হয়ে যাবে।

পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ সাঈদুর রহমান জানান, প্রতিটি পূজা মন্ডপে সার্বক্ষনিক সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় নিবিড় পর্যবেক্ষন সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে।  এছাড়া মন্ডপ গুলোতে গোয়েন্দা সদস্যদের নজরদারিও থাকবে।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, প্রতিটি পূজা মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, করোনা ভাইরাস এড়াতে মাস্ক ও স্যানিটাইজার রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে মন্ডপে আগত ভক্তদের আহার্য বাবদ মন্ডপ প্রতি ৫০০ কেজি হারে সর্বমোট ২৮৯ মেট্রিক টন ত্রাণ (চাল) বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। যা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ে পৌছে দেয়া হবে।