দেশের উত্তরঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচিনতম রেলওয়েস্টেশন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী। যাতায়াতের জন্য এই অঞ্চলের মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ট্রেন।
ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা, সান্তাহার, রংপুর, নিলফামারী, চিলাহাটি,পঞ্চগড়,ঠাকুরগাঁ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন। এই রেলস্টেশন দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকাগামী অন্তঃনগর নীলসাগর,দ্রুতযান,একতা এক্সপ্রেস এবং আন্তঃনগর তিতুমির এক্সপ্রেস,বরেন্দ্র এক্সপ্রেস,বাংলাবান্দা এক্সপ্রেস,সিমান্ত এক্সপ্রেস সহ অন্যান্য ট্রেন এই রুটে চলাচল করে থাকে। ফুলবাড়ী রেলষ্টেশন দিয়ে চলাচলরত এসব ট্রেনে চাহিদার তুলানায় আসন সংখ্য বরাদ্দ কম থাকায়,চাহিদা পুরন না হওয়ায় চরম দুর্ভেগে পড়ছেন এই এলাকার যাত্রীরা। তাই আসন বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী তুলেছেন শিক্ষার্থী,ব্যবসায়ী,চাকুরীজিবী সহ এই এলাকার অন্যন্য পেশার মানুষ। এদিকে রেলওয়ে কতৃপক্ষ বলছেন অতিরিক্ত কোচ না থাকায়,কোচ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছোনা। সেকারনে কোঠা বাড়ানো যাচ্ছেনা।
অপরদিকে যাত্রীরা বলছেন এই রেলষ্টেশনে আসন সংখ্যা বাড়ালে একদিকে যেমন যাত্রীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ কমবে অপরদিকে সরকারের রাজস্ব্য বাড়বে।
এই উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভার মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৮ হাজার ৯৮৪ জন ও মহিলা ৮৭ হাজার ০৩৯ জন।
শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২০৮টি, এনজিও ৩৫টি, বীমা ৮টি ও সরকারী একটি ব্যাসরকারী মেলে ১০টি ব্যাংক এবংএকটি বিজিবি ক্যাম্প সদর দপ্তর রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা পরিসংখ্যান তদন্ত কর্মকর্তা মিথুন কুমার সরকার।
শিক্ষা অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই উপজেলায় কলেজ,মাধ্যমিক বিদ্যালয়,প্রাথমিক বিদ্যালয়,কারিগরি শিক্ষা,ফাজিল ও আলিম মাদরাসা ও কিন্ডার গার্ডেন সহ ২৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্ত-কর্মচারী সহ এই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে।
এছাড়াও ফুলবাড়ী উপজেলার পার্শবর্তি ৫ কিলোমিটার দুরে রয়েছে একটি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদুৎ কেন্দ্র এবং দেশের একমাত্র বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও ১১কিলোমিটার দুরে মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনি এবং ১২ কিলোমিটার দুরে উত্তর বঙ্গের বৃহত্তর পিকনিক স্পট স্বপ্নপুরি। এসব প্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ী উপজেলার সন্নিকটে হওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠান গুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীরাও ফুলবাড়ী রেলষ্টেশন দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে।
গুরুত্বপুর্ণ এই রেলষ্টেশনে পর্যাপ্ত আসন সংখ্যা বরাদ্দ না থাকায় যাত্রীদের আসনের চাহিদা মেটাতে পারছে না এই ট্রেন গুলোতে। আসন বাড়িয়ে সমস্যা সমাধানের দাবি উঠলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহসাই এটি পূরণ হচ্ছে না।
ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানাগেছে, ঢাকা গামী অন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে স্থানীয় যাত্রীদের জন্য শিততাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) শ্রেণির জন্য অনলাইনে পাঁচটি এবং অফলাইনে পাঁচটিসহ শোভন শ্রেণির জন্য অনলাইনে দশটি এবং অফলাইনে দশটি আসন বরাদ্দ রয়েছে। একইভাবে ঢাকাগামী আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে শুধুমাত্র শোভন শ্রেণির জন্য অনলাইনে ১৩টি ও অফলাইনে ১৩টি এবং দ্রæতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অনলাইনে ১৫টি এবং অফলাইনে ১৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। তবে একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রথম শ্রেণি কিংবা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরার জন্য কোন আসন বরাদ্দ নেই এই রেলষ্টেশনে।
এছাড়া ফুলবাড়ী থেকে রাজশাহী গামী আন্তঃনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন শ্রেণির অনলাইনে ১৫টি এবং অফলাইনে ১৫টি, বাংলাবান্ধা ও তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেন দুইটিতেও শোভন শ্রেণির জন্য অনলাইনে ১৫টি এবং অফলাইনে ১৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। এই তিনটি অন্তঃনগর ট্রেনেও এখান থেকে প্রথম শ্রেণি কিংবা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরার কোন আসন বরাদ্দ নেই। অনুরুপভাবে খুলনা গামী আন্তঃনগর রুপসা এক্সপ্রেস ও সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে শুধুমাত্র শোভন শ্রেণির জন্য অনলাইনে ১৫টি এবং অফলাইনে ১৫টি করে আসন বরাদ্দ রয়েছে। এই দুইটি ট্রেনেও প্রথম শ্রেণি কিংবা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরার কোন আসন বরাদ্দ নেই।
ফুলবাড়ী বাজারের ব্যবসা ছাখোয়াত হোসেন,ওলি চৌধুরী ও জুলফিকার আলী বলেন, ব্যবসার কাজে প্রায়ই ঢাকা যাতায়াত করতে হয় তাদের। অনেক সময় অনলাইনে টিকিট না পেয়ে,স্টেশনে গিয়েও টিকিট পাওয়া যায় না। এতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। তাই তারা ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান রুবেল বলেন,ফুলবাড়ীতে আসন বরাদ্দ কম থাকায় সময়মত টিকিট পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক সময় কালোবাজারীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনতে হয়। একই কথা বলেন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
সে কারনে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আসন সংখ্য বাড়ানোর জোর দাবী জানিয়েছেন।
স্টেশন মাস্টার ইস্রাফিল সরকার জানান, আসন বরাদ্দ কম হওয়ায় টিকিট না পেয়ে অনেক যাত্রীদের ফিরে যেতে হয়। সে কারনে ফুলবাড়ীতে প্রত্যেকটি ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
এবিষয়ে ফুলবাড়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন,ট্রেনের যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ কমাতে ট্রেনগুলোর আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, ফুলবাড়ী রেল স্টেশন দিয়ে ফুলবাড়ীসহ পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের একাংশের মানুষ যাতায়াত করেন। এছাড়াও এই উপজেলার পার্শবর্তি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদুৎ কেন্দ্র,বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনি রয়েছে। সে কারনে এটি একটি গুরুত্বপুর্ণ রেল ষ্টেশন।
তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ফুলবাড়ীতে প্রত্যেকটি ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রথম শ্রেণি ও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এসি কামরার জন্য আসন বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আসন বাড়ানোর বিষয়টি ব্যবস্থা করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক আসীম কুমার তালুকদার আজকের পত্রিকাকে জানান,ফুলবাড়ীর আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যাক্তিরা যে অধিকাংশ সময় ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন এব্যাপারে আমরা সচেতন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কোচের সমস্যা, নতুন কোচ তৈরী করারও সামর্থ নেই,অতিরিক্ত কোচ না থাকায়,নতুন করে কোচ সংযোজন করাও সম্ভব হচ্ছেনা। বর্তমানে ১৩টি করে কোচ রয়েছে,অন্য কোথাও থেকে কোচ এনে সংযোজন করলে সেখানেও একটা সংক্ষুধ্যতা দেখা দেবে,সেকারনে এখন কোচ সংযোজনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কোচ বাড়ানো ছাড়া কোঠা বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে কোচ বাড়ানোর ব্যবস্থা হলে আসন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।