কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ করেছেন একই কমিটির এক কথিত নেত্রী। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ সহ জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা ছাত্রলীগ।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেটের ৪র্থ তলায় কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে আমিও আমার দলের নেতাকর্মীরা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মাসের পর মাস সেচ্ছাসেবী হিসেবে সেবা দিয়েছে। শুধু তাই নয় অসহায়-দরিদ্র মানুষকে ত্রান সাহায্য করেছে, কৃষকের মাঠের ধান কেটেমাড়াই করে ঘরে তুলে দিয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোন টেন্ডার, হাট-ঘাট, বালি উত্তোলন, চাঁদাবাজি সহ কোন অভিযোগ আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। ছাত্রলীগ এই সকল অপরাধের সাথে যুক্ত নয়। কোন অপরাধের সাথে যখন ছাত্রলীগকে জড়াতে পারেনি তখন পরিচ্ছন্ন ও পরিশ্রমী ছাত্রলীগ নেতাদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেছে, থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। ছাত্র নেতাদের চরিত্র নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন অভিযোগ নেই। অথচ সংগঠনের মধ্যে ঘাপটে মেরে থেকে সংগঠনের ছেলেদের বিরুদ্ধে অযাচিত উদ্ভট অভিযোগ হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের ফাঁদে পা দিয়ে এ অশুভ চক্রান্ত চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের যে সকল নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা সঠিক নয়। কথিত ওই নেত্রী আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগের নেতাদেরও ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ সকল অশুভ ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে চাই, করবেও।
তিনি আরও বলেন, কথিত ওই নেত্রী বিবাহিত, অনেকের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এবং বিভিন্ন পুরুষের সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সেবস ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কে বা কারা ছড়িয়েছে তারা আমাদের জানা নেই। ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহি সংগঠনের জন্য লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মনগড়া অভিযোগ ঘৃণাভরে প্রত্যাক্ষান করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া জেলা শাখার নেতাকর্মীরা।
তিনি বলেন, কুষ্টিয়া জেলা শাখার পূর্নাঙ্গ করার আগে বাচাই-বাছাই করতে গিয়ে ওই মেয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামীলীগ থেকে নিস্তর অভিযোগ পেয়েছিলাম, বিয়ে করে মামলা দিয়ে জোর করে অর্থ আদায়, অনৈতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটিতে তার নাম দেয়া হয়নি। এতোগুলো সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের সাথে সম্পৃক্ততার কথা জানতে পেরে, আমি ও সভাপতি তাকে ছাত্রলীগের রাজনীতি না করে অন্য কোন সংগঠন করার জন্য বলেছিলাম।
সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আমারা পেয়েছি। তার জন্য আমাদের পরিশ্রম করে গড়া ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। সে ষড়যন্ত্রমূলক, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ছাত্রলীগের পরিচ্ছন্ন ও পরিশ্রমী নেতাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নেতাকে ফাঁসাতে গিয়ে নেত্রীই ফেঁসে গেলেন।
আর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের একাধিক নেতার দাবি ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা-অসত্য অভিযোগ তোলা হয়েছে। ওই মেয়ের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ওই তরুণী বলেন, কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আমাকে হয়রানির শিকার করেছে। কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আমার ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে আমার এবং আমার পরিবারের সম্মান চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছেন। আমি তাদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। তবে আমি ধারণা করছি চ্যালেঞ্জ ও তার লোকজন এসব করছে।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী। অভিযোগপত্রে তরুণী উল্লেখ করেন, কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করতাম। একপর্যায়ে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাবসহ শ্লীলতাহানির চেষ্টা করায় প্রায় একমাস আগে তার কাছ থেকে সরে আসি। এরপর থেকে তিনিসহ অন্যান্য বিবাদীরা আমার সঙ্গে রাস্তাঘাটে দেখা হলে বিভিন্ন আজেবাজে কথাবার্তা বলাসহ আমাকে ফলো করতে থাকেন।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন, চ্যালেঞ্জ ভালো মানুষ ও জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আগে কোনদিন শুনিনি। পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষের লোকজন চ্যালেঞ্জকে ফাঁসানোর জন্য নোংরামি করছে। তাছাড়া যে তরুণী অভিযোগ এনেছে তার চরিত্র ভালো না, এটা কুষ্টিয়ার সবার জানা। ওই তরুণীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।