নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১
ঝুঁকি
নিয়ে চলছে যাতায়াত। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনাও। চার্জ দেওয়ার কারণে অপচয় হচ্ছে প্রচুর
বিদ্যুৎ। অস্বাভাবিক গতি থাকায় চালকেরা এর নাম দিয়েছে ‘পঙ্খিরাজ’।
তবে গ্রিক পুরাণের সেই ঘোড়ার মতো এটা আকাশে উড়তে পারে না। বরং এলোমেলো চলাচল করে কেবল
যানজটের ভোগান্তিই বাড়াচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়
দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত এসব রিকশা।
২০১৭
সালে রাজধানীতে এ ধরনের রিকশা বন্ধে নির্দেশনা দেন সর্বোচ্চ আদালত। চলতি বছরের জুনে
সচিবালয়ে এক সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও ব্যাটারিচালিত রিকশা
বন্ধের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। তারপরও প্রভাবশালী একটি চক্রের ছত্রচ্ছায়ায় রাজধানীজুড়ে
অবৈধ এই রিকশা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টোকেন-বাণিজ্যের মাধ্যমে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে
কোটি কোটি টাকা।
২০০৮
সালে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি রিকশায় বিদ্যুৎ অপচয়কারী ব্যাটারি ব্যবহার করে এ যান তৈরি
করেন। এর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সড়ক দুর্ঘটনা ও লোডশেডিং। টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের।
২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি সরকার এ ধরনের রিকশা চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে। শুধু
তা-ই নয়, ২০১৩ সালে ফজলুর রহমান, ২০১৪ সালের শুরুতে মোস্তফা, এম এ বোরহানসহ কয়েকজন
এসব রিকশা চলাচল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। কিন্তু ২০১৪ সালের ৬ জুলাই
হাইকোর্ট সব রিট খারিজ করে দেন।
এরপর
একটি চক্র প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ ধরনের রিকশা চলাচলে সহায়তা করছে। জাতীয় রিকশা-ভ্যান
শ্রমিক লীগের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর কদমতলী, শ্যামপুর, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর,
মুগদা, খিলগাঁও, মিরপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, চকবাজার, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচরসহ রাজধানীর
বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করছে প্রায় ২ লাখ রিকশা। যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায়
চলাচল করে প্রায় ১৫ হাজার রিকশা।
নামসর্বস্ব
সংগঠনের ব্যানারে এলাকাভেদে কয়েকটি চক্র টোকেনের মাধ্যমে এসব রিকশা থেকে প্রতি মাসে
গড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। এতে মাসে প্রায় ১৪ কোটি টাকা আয় হয়। শ্যামপুর-কদমতলীতে
মালিক-শ্রমিক ঐক্য জোট, ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক-শ্রমিক একতা সংঘ, ব্যাটারিচালিত
রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন নেমপ্লেট ব্যবহার করে চলে এই রিকশা।
শ্যামপুরে
ব্যাটারিচালিত রিকশা চক্রের সঙ্গে দাদন, আনোয়ার, মোনির সামসু, ইদ্দিস, ফারুকসহ আরও
অনেকে জড়িত আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দাদন বলেন, ‘আমরা নেমপ্লেট দেওয়ার মাধ্যমে
মাসিক ভিত্তিতে টাকা নিয়ে থাকি। যার বিনিময়ে পুলিশের হাত থেকে এ রিকশা ছাড়ানোর ব্যবস্থা
করি।’
সোহাগ,
হাকিম, আরিফসহ কয়েকজন রিকশাচালক বলেন, ‘আমরা মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিলেও পুলিশ ধরলে
নিজেদের টাকা দিয়েই রেকার বিল দিই। আবার টোকেন না নিলেও রিকশা চালাতে দেয় না।’
নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টোকেনদাতা বলেন, এলাকাভেদে প্রতি রিকশা বাবদ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা
করে থানা-পুলিশকে মাসোয়ারা দিতে হয়।
প্রতিদিন
প্রতি রিকশায় ব্যাটারিতে ৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। এই হিসাবে রাজধানীর ২ লাখ রিকশায়
ব্যবহৃত হয় ১০ লাখ ইউনিট বা ১ হাজার কিলো মেগাওয়াট। ফলে দৈনিক অপচয় হচ্ছে প্রায় ১ কোটি
টাকার বিদ্যুৎ। তা ছাড়া অধিকাংশ রিকশার গ্যারেজের মালিকেরা অবৈধ সংযোগ দিয়ে এসব রিকশার
ব্যাটারি চার্জ দেন। অনেকে ফাঁকি দেন বিদ্যুৎ বিলও।
এ
প্রসঙ্গে জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী বলেন, ‘আমরা শুরু
থেকেই এ ধরনের রিকশা বন্ধে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকা
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র এসব রিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন। আমরা
চাই এই ঘোষণার বাস্তবায়ন হোক।
ডিএসসিসি
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আমরা আশা করব পুলিশ এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা
নেবে। ঢাকা মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান জানান, তিন-চার
মাস আগে থেকেই আমরা এসব রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। যেহেতু হাইকোর্ট
নিষিদ্ধ করেছেন, সেহেতু আমরা এসব রিকশা যেখানে যে অবস্থায় পাচ্ছি আটক করছি। প্রয়োজনে
লোকবল বাড়িয়ে তদারকি করা হবে।’
সুত্র:
আজকের পত্রিকা