হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট সিমান্ত দিয়ে ৩৪ মাসে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার মাদক আটক করেছে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে এগুলো বহনকারি কোন আসামি আটক করতে পারেনি সীমান্তরক্ষী বাহিনীটি।
আর হবিগঞ্জ ব্যাটলিয়ান (৫৫ বিজিবি) ২০ মাসে ৭১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫০ টাকার মাদক আটক করেছে। এতে ২৯৩ জনকে আটক করে মামলা দেয়।
আটককৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে দেশি-বিদেশি মদ, ভারতিয় গাজা, ফেন্সেডল, ভারতীয় বিয়ার, ক্যান, ইয়াবা ট্যাবলেট, ইস্কপ সিরাপ, নাসির পাতার বিড়ি ও বাবা জর্দা রয়েছে।
তবে, আসামীবিহীন মালামাল আটকের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলছেন, দেশে এত মাদক আসছে কিন্তু কে আনছে কারা আনছে তাকে যদি ধারা না যায় বা কে বহন করছে তাকে যদি চিহ্নিত করা না যায় তাহলে দিনদিন মাদক কারবারিদের বিস্তার বাড়বে।
তবে বিজিবি বলছে, বিজিবি যখন অভিযান চালায় তখন পাচারকারীরা মাদক রেখে ভারত সিমান্তে ডুকে যায়। যে কারণে তাদের আটক করা সম্ভব হয় না।
শনিবার শ্রীমঙ্গল ব্যাটলিয়ান (৪৬ বিজিবি), বিয়ানিবাজার ব্যাটলিয়ান (৫২ বিজিবি) এবং হবিগঞ্জ ব্যাটলিয়ানের (৫৫ বিজিবি) মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠান শেষে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চত করেন ৫৫ বিজিবির অধিনায়ক এসএম সামিউন্নবী চৌধুরী।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন সিমান্ত দিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ১১৯০৮ বোতল ভারতীয় মদ, ৬২ হাজার লিটার ৬০০ গ্রাম মদ, ৭ হাজার ৩৮৪ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিল, ৫ হাজার ৫৯১ কেজি ১ গ্রাম গাজা, ৯০৯ বোতল ভারতীয় বিয়ার, ১৫ হাজার ৭২৬ পিস ভারতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩৭৮ বোতল ইস্কপ সিরাপ। ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ২০০পিস নাসির পাতার বিড়ি, ৪৭৫ প্যাকেট বাবা জর্দা ধ্বংস করা হয়। যার বাজার মূল্য ৫ কোটি ২৯ লাখ ৪১ হাজার ৮৮০ টাকা।
এ বিষয়ে আইনজীবী এডভোকেট হাফিজুল ইসলাম বলেন, সিমান্তে রাক্ষায় বিজিবি পেশাদারিত্ব প্রশ্ন। এত বিপুল পরিমান মাদক দেশে আসল এগুলোতো হাওয়ায় ভরকরে আসেনি। এগুলো নিশ্চয় একটি সংগববদ্ধ মাদককারবারী। এরা সংগবদ্ধ ভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের খুজে বের করা আইনশৃঙ্কলা বাহিনীর দায়ীত্ব। এখন তাদের যদি কোন কিছুর অভাব থেকে থাকে যেমন কোন ধরণের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন হয় তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সাহায্যকরা। যদি কেউ এগুলোতে জরিত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
কেন চোরাকারবারী ধরা যায় না- এই প্রশ্নের উত্তরে বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এস এন এম সামীউন্নবী চৌধুরী জানান, বিজিবি যখন অভিযান চালায়, চোরাকারবারীরা টের পেয়ে ভারতের সীমান্তে ঢুকে পড়ে। যে কারণে অন্য দেশের ভেতর প্রবেশ করে তাদের ধরা সম্ভব নয়। যে কারণে এই সুযোগটা মাদক চোরাকারবারীরা নিয়ে থাকে।
তিনি আরো জানান, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)'র সদস্যরা নির্দিষ্ট এলাকা বা চৌকিতে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যে কারণে দুর্গম এলাকায় চোরাকারবারীদের ধরতে তাদের সাহায্য পাওয়া যায় না।
এসএনএম সামিউন্নবী চৌধুরী বলেন, 'আমি প্রতিমাসে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে মাদক চোরাচালান বন্ধে তাদের কাছে চিঠি দেই। চিঠিতে মানবতার বিষয় তুলে ধরে ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য চোরাচালান বন্ধে তাদের সাহায্য প্রার্থনা করি। তারাও চোরাচালান রোধের বিষয়টি প্রশংসা করে আমার চিঠির উত্তর দেন।