নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
দিনাজপুরের
বীরগঞ্জে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার কৃষককে
ঋণের ফাঁসে আটকে দেওয়ার অভিযোগ
পাওয়া গেছে সোলারগাঁও অ্যাগ্রো
লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের
বিরুদ্ধে। এভাবে তারা আত্মসাৎ করেছে
সাড়ে ৭ কোটি টাকা।
কৃষকেরা এ অভিযোগ তোলার
পর এখন তল্পিতল্পা গুটিয়ে
ভেগে যাওয়ার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা
গেছে, প্রতারণার শিকার কৃষকেরা বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে দিনাজপুর জেলা প্রশাসককে একটি
লিখিত অভিযোগ দেন ১৩ সেপ্টেম্বর।
পরদিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুরেজা
মো. আসাদুজ্জামানকে বিষয়টি তদন্ত করে ২৩ সেপ্টেম্বরের
মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন ইউএনও
মো. আব্দুল কাদের। এরপর বিষয়টি শুনানির
জন্য সোলারগাঁওয়ের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, ভুক্তভোগী কৃষকসহ অন্যদের ২২ সেপ্টেম্বর নিজ
কার্যালয়ে হাজির হতে চিঠি দেন
কৃষি কর্মকর্তা। কিন্তু নির্ধারিত দিনে কৃষকেরা হাজির
হলেও অভিযুক্তরা যাননি।
লিখিত
অভিযোগ ও ভুক্তভোগী কৃষকদের
সঙ্গে কথা বলে জানা
গেছে, বীরগঞ্জ পৌর শহরের খানসামা
রোডের পোস্ট অফিস মোড়ে বাসা
ভাড়া নিয়ে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে
কৃষিজমিতে পানি সরবরাহের একটি
প্রকল্প চালু করে সোলারগাঁও
অ্যাগ্রো ইঞ্জিনিয়ার্স এন্টারপ্রাইজ। বিশ্বব্যাংকের ইটকল প্রজেক্ট সোলারগাঁওয়ের
প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করে। বীরগঞ্জ অফিসের
আওতায় বীরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি
উপজেলায় ৮২টি পয়েন্টে সৌরবিদ্যুতের
মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা
হয়। প্রকল্পটি চালু করার সময়
সুবিধাভোগী কৃষকদের আর্থিক ঋণ দেওয়ার কথা
বলে তাঁদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়।
এরপর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার জন্য তাঁদের
খানসামা রোডে অবস্থিত ব্যাংক
এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যালয়ে যেতে বলা হয়।
আর্থিক অনিয়মের সুবিধার্থে সোলারগাঁও অ্যাগ্রো ইঞ্জিনিয়ার্স এন্টারপ্রাইজ ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাটির অনুমোদন নেয়। এজেন্ট ব্যাংকিংটি
পরিচালনা করেন সোলারগাঁওয়েরই নিয়োগ
দেওয়া এক ব্যক্তি। সেখানে
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন ২ হাজারের বেশি
কৃষক। তখন কৃষকদের অজান্তে
তাঁদের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে
প্রত্যেকের নামে একটি করে
মোবাইল সিম কার্ড চালু
করা হয়। তাঁরপর প্রত্যেক
কৃষকের নামে ৫০ হাজার
টাকা করে ঋণ বরাদ্দ
করা হয়। কিন্তু কৃষকদের
৫০ হাজার টাকা না দিয়ে
৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০
হাজার টাকা দেওয়া হয়।
সেটাও সব কৃষককে দেওয়া
হয়নি। বাকি টাকা সোলারগাঁও
তুলে নেয় ওই সব
মোবাইল সিম ব্যবহার করে।
এভাবে কৃষকদের নামে ঋণ বরাদ্দ
দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ৭ কোটি
টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে কৃষকদের অভিযোগ।
ঋণ
জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হলে কৃষক ও
ভুক্তভোগীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে
পড়ে। তখন তাঁরা ইউএনওর
মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর
আবেদন করেন।
ভুক্তভোগী
কৃষক ও পাম্প অপারেটর
কাহারোল উপজেলার ডাবর ইউনিয়নের মাধবগাঁও
পূর্ব কান্দর প্রজেক্টের যতীশ চন্দ্র রায়
জানান, সেখানকার মাত্র সাতজন কৃষক ৮ হাজার
টাকা করে পেয়েছেন।
একই
এলাকার ঘোড়ামাড়া প্রজেক্টের সোমারু মালাকার বলেন, ‘সোলারগাঁওয়ের লোকজন অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য
আমাদের চাপ দিচ্ছেন। নানাভাবে
হয়রানির হুমকিও দিচ্ছেন।’
এদিকে,
বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সোলারগাঁও তাদের
বেশকিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন অভিযোগে চাকরিচ্যুত করে। আবার অনেকে
নিজেরাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে
জানা গেছে। এ ছাড়া সোলারগাঁও
ট্রাক লাগিয়ে বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জ, বোচাগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা তাদের মালামাল
সরিয়ে নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
চাকরিচ্যুত
কর্মচারী মো. জীবন ও
বিল্লাল আলী বলেন, ‘ভুক্তভোগী
কৃষক ও পাম্প অপারেটরদের
পক্ষে কথা বলায় ও
তাঁদের অভিযোগে স্বাক্ষর করায় আমাদের চাকরিচ্যুত
করা হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানির হুমকিও দিচ্ছে।’
অভিযোগের
বিষয়ে জানতে চাইলে সোলারগাঁও লিমিটেডের দিনাজপুরের জিএম আশরাফুল আলম
সুমন বলেন, ‘ঋণ নিয়ে কৃষকদের
সঙ্গে কোনো প্রতারণা করা
হয়নি। বিভিন্ন অপকর্ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অর্থ
আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠান থেকে
পালিয়ে যাওয়া পাঁচ-ছয়জন কর্মী
কৃষকদের উসকানি দিয়ে এমন অভিযোগ
তুলেছেন। আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বীরগঞ্জ
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের
জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা কৃষি
কর্মকর্তা আবু রেজা মো.
আসাদুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের নিয়ে কোনো প্রতারণা
প্রমাণিত হলে ওই প্রতিষ্ঠানের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষি
কর্মকর্তা আবু রেজা বলেন,
কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। শুনানির জন্য ডাকা হলেও
সোলারগাঁও ও ব্যাংক এশিয়ার
কর্মকর্তারা আসেননি।