রোহিঙ্গাদের সহজ শর্তে মোবাইল সিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী মন্তব্য করে সিম না দেওয়ার দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সংগ্রাম কমিটি।
সিমের অপব্যবহারের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অপরাধ আরও বেপরোয়া হয়ে যাবে, যা স্থানীয় বাসিন্দাসহ গোটা বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রোহিঙ্গাদের সিম প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে পাঁচটি করে সিম প্রদান করা যাবে না। আমরা দেখেছি মহিবুল্লাহ এই অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কীভাবে লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমাবেশ করেছিল। এই রোহিঙ্গারা অবৈধ নেটওয়ার্ক সিম ব্যবহার করে মাদক পাচার, অর্থপাচার, চোরাচালান, অসামাজিক কার্যে লিপ্ত হয় হাজারের মতো এইডস রোগী আজ শুধু কক্সবাজার জেলা নয়, সারা বাংলাদেশের জন্য আতংক তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, তার মানে আমরা অমানবিক একথা বলা যাবে না।তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে সাবেক ডাক ও টেলিযোগমন্ত্রী যেভাবে টেলিফোন বুথ তৈরি করে সেখানে গিয়ে বিনামূল্যে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, সেটি কেন বন্ধ হলো। সব সিম উদ্ধার করে সঠিক মালিকদের কাছে সেই সিম বুঝিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে টেলিফোন বুথের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়ার পালংখিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা কক্সবাজারে নাগরিকরা আজ মহাবিপদে। আমাদের আশ্রয় দেওয়ার মানবিক দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী যে মানবতা দেখিয়েছেন, তা যে আমাদের জন্য এত বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারিনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণসহ সব ভয়ংকর অপরাধে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ মোবাইলফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পাশাপাশি মিয়ানমারের এমটিএমসির টেলিকম নেটওয়ার্কও ব্যবহার করে আসছে, যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে মাঝে মাঝে বিটিআরসির কিছু কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বক্তারা বলেন, ২০১৫ সালে সরকার দেশে যখন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে, তখন সেই নীতিমালায় বলা হয় বাংলাদেশের কোনো বৈধ নাগরিক যার বয়স ১৮ বছর সেই ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র বা তার পাসপোর্ট দিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করতে পারবে। অথচ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশের নাগরিকদের নামে নিবন্ধিত সিম অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের টেলিকম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে দেদারসে। এর মাধ্যমে মিয়ানমারে টেলিকম প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও ব্যবসা পরিচালনা করছে। টেলিকম সেবা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা মিয়ানমারে চলে গেছে। এখন রোহিঙ্গা নাগরিকদের বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাঁচটি করে সিম দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। এর মাধ্যমে হয়ত অপারেটরদের মোটা দাগে কিছু ব্যবসা পরিচালনা হবে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা, সন্ত্রাস মাদকের মতো মহামারি ব্যাপকতা সৃষ্টি করতে পারে।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন- সাবেক ডিআইজি মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব আবদুল্লাহ আল মামুন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আজম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম সবুজ, জননেতা এম মোস্তাক আহমেদ ভাষানী, কক্সবাজার লবণ চাষী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দীন প্রমুখ।