দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথকে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সহ দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
সোমবার দুপুরে চিঠিটি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ অন্যান্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ। উপরোক্ত বিষয়ে আপনার লিখিত জবাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা দেওয়ার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দ্ব›দ্ব চলছে। এ নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এর জেরে গত ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯ জন আওয়ামীলীগ কর্মী খুনের শিকার হয়। দুই পক্ষের মধ্যে এক পক্ষে আছেন এমপি পংকজ দেবনাথ আর অপর পক্ষে আছেন জেলা আওয়ামীলীগ সমর্থনপুষ্ট দুই উপজেলা আওয়ামীলীগ।
সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছিল। আহত নেতাকর্মীরা এমপি পংকজ বিরোধী এবং ঘটনার অভিযুক্তরা পংকজ অনুসারী।
এর আগে গত জুলাই মাসে এমপি পঙ্কজের মোবাইল ফোনের একটি কল রেকর্ড ভাইরাল হয়। সেখানে এমপি পংকজ মেহেন্দিগঞ্জ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে শোনা যায় “আমার কর্মীদের বলে দিয়েছি- রামদা নিয়ে রেডি থাকতে। সামনে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই কোপানো হবে। মেয়রকে পেলেও কোপানো হবে।”
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস পংকজ দেবনাথকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার একটি চিঠি পেয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, মেহেন্দীগঞ্জে আ.লীগকে বিভক্ত করে নিজের বলয় সৃষ্টি করে পংকজ দেবনাথ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, পঙ্গু করে দেওয়া, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এমপি পংকজ দেবনাথ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া তার স্থানীয় আওয়ামী লীগে কোনো পদ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অব্যহতি প্রাপ্ত পংকজ দেবনাথ এমপি বলেন, কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে অব্যহতির একটি চিঠি পেয়েছি। এছাড়া তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে পংকজ দেবনাথকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।