দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আকস্মিক অভিযানে পাল্টে গেছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসকদের উপস্থিতি, অবস্থান ও চিকিৎসাসেবার চিত্র।
মঙ্গলবার সকালে দুদকের ওই অভিযানের পর গতকাল বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে-ই কাজে যোগদান করেন আন্তঃ ও বহির্বিভাগের বেশিরভাগ চিকিৎসক।
অন্যান্য দিন আন্তঃ ওয়ার্ডে সিনিয়র ডাক্তারদের পরিদর্শন (রাউন্ড) শেষ হতে বেলা ১২ থেকে দুপুর ১ টা লেগে গেলেও বুধবার রাউন্ড শেষ হয়েছে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে। এতে স্বস্তি ফিরেছে রোগীদের মাঝে। উপলব্ধি হওয়ায় ডাক্তাররা যথা সময়ে অফিস করছেন বলে মন্তব্য করেছেন হাসপাতালের সহকারি পরিচালক।
শেবাচিমের ১৭টি আন্তঃ এবং ১৬টি বহির্বিভাগে ডাক্তাররা বুধবার অফিসে পৌঁছেছেন সকাল ৮টার মধ্যে। অন্যান্য দিন ৯টার পর বর্হিবিভাগে কার্যক্রম শুরু হলেও বুধবার ৮টার দিকেই রোগী দেখতে শুরু করেন চিকিৎসকরা। আন্তঃবিভাগেও ৮টার মধ্যে উপস্থিত হন বেশীরভাগ চিকিৎসক। আন্তঃওয়ার্ডগুলোতে সিনিয়র ডাক্তারদের রাউন্ড (পরিদর্শন) দিতে দুপুর ঠেকে গেলেও বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে শেষ হয় সব ওয়ার্ডের রাউন্ড। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেন চিকিৎসাধীন রোগীরা।
একদিনের ব্যবধানে ডাক্তারদের উপস্থিতির চিত্র পাল্টে যাওয়ার রহস্য জানতে চাইলে শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, ডাক্তারদের হয়তো উপলব্ধি হয়েছে। সে কারণে তাঁরা যথা সময়ে অফিসে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালে বর্হিবিভাগে অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা। আন্তঃ ওয়ার্ডে ৮টায় অফিস সময় শুরু হলেও সেখানে সারা দিন কাজ থাকে ডাক্তারদের।
এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের সিনিয়র থেকে জুনিয়র সকল স্তরের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রাইভেট প্রাকটিসের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কোন কোন সিনিয়র চিকিৎসক সপ্তাহে একদিনও মেডিকেলে অফিস করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার অফিসে গেলেও হাজিরা দিয়ে সটকে পড়েন প্রাইভেট চেম্বারে রোগি দেখতে।
মঙ্গলবার সকালে আকস্মিক দুদকের অভিযানেও তাঁর প্রমাণ মেলে। ওইদিন সকালে আন্তঃ ও বর্হিবিভাগে কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎক ছাড়া মিড লেভেল কিংবা কোন সিনিয়র চিকিৎসকে যথা সময়ে অফিসে পাননি দুদক কর্মকর্তারা। হাসপাতালের পরিচালক এবং কলেজের অধ্যক্ষকেও দপ্তরে পাননি তাঁরা। নির্ধারিত সময়ের পর অফিসে পৌঁছা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে দুদক কর্মকর্তারা ফিঙ্গার বায়োমেট্রিক হাজিরার প্রিন্ট কপি চাইলেও তা দেননি তিনি। এ নিয়ে বাদানুবাদ হয় উভয় পক্ষের মধ্যে। এ নিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যহারের অভিযোগ তোলেন ডাক্তাররা।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশাল জেলা শাখা জরুরি সভা করে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার বিচার দাবিতে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন চিকিৎসকরা।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় নগরীর কাশিপুর বিভাগীয় সদর দপ্তরে বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশাল জেলা কমিটি এই স্মরকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে বিএমএ বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি ডা. মো. ইসতিয়াক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মনিরুজ্জামীন শাহীন, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. এস.এম সারওয়ার, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর ডা. সৌরভ সুতার, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মো. মাসরেফুল ইসলাম সৈকত, সাংস্কৃতিক ও বিনোদন সম্পাদক ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএমএ সভাপতি ডা. ইসতিয়াক হোসেন বলেন, দুদকের অভিযান চালানোর অধিকার রয়েছে। অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তাঁরা অভিযান করবে। তাই তাদের অভিযান নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু দুদকের সহকারী পরিচালক ও তাঁর টিম চিকিৎসকদের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করেছে সেটা সকল চিকিৎসকদের জন্য অপমানজনক। তাই আমরা এই ঘটনার বিচার দাবি করছি।
উল্লেখ্য, শেবাচিম হাসপাতালের ৫শ’ শয্যার ২২৪টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৫০ জন এবং মেডিকেল কলেজে ১২২ জন ডাক্তার রয়েছে ২৯১ জনের বিপরীতে।