যশোরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে মরণব্যাধি এইচআইভি (HIV) ভাইরাসে আক্রান্ত এইডস রোগীর সংখ্যা। চলতি বছরের আগস্টে চার জনের শরীরে এইডসের জীবাণু পাওয়া যায়।
এদিকে, চলতি মাস সেপ্টেম্বরের প্রথম চার দিনে চার জনের শরীরে এইচআইভি জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ গত ৩৫ দিনে জেলায় মোট আট জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ সকল রোগীদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এইচআইভি- এইডস পরীক্ষা কেন্দ্র (এইচটিসি) সেন্টারে পরীক্ষা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে গত ২০ বছরের ইতিহাসে এ জেলায় এত অল্প সময়ের ব্যবধানে এত সংখ্যক এইডস্ রোগী শনাক্ত হয়নি। এ পরিস্থিতিকে একটি সতর্ক হওয়ার বার্তা বলে মনে করেছেন তারা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারে গত ২০২০ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী থেকে এইচআইভি টেস্ট শুরু হয়। সে সময় থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৯৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
চলতি বছরের গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে চার দিনে ৩০ জনের এইডস পরীক্ষা করা হয়। এর ভেতর চার জনের শরীরে এইডসের জীবাণু শনাক্ত হয় এবং আগস্ট মাসেও ১৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে চার জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাসেরর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত গোটা জেলায় এইডস্ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জন।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের গত ৬ সেপ্টেম্বর ৩০ জনের রক্ত পরীক্ষা করে তিন জনের শরীরে এইডস শনাক্ত হয় এবং ৪ সেপ্টেম্বর একজনের শরীরে এইডস্ শনাক্ত হয়। পরের দিন ৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ জনকে পরীক্ষা করা হলে তাদের শরীরে এইডস ভাইরাসের সন্ধান মেলেনি।
এর আগে গত আগস্ট মাস জুড়ে ১৩২ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এর ভেতরও চার জনের শরীরে এইচআইভি- এইডসের জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৯ আগস্ট একজন, ১৬ আগস্ট একজন, ৭ আগস্ট একজন ও ৪ আগস্ট একজন শরীরে এইচআইভি শনাক্ত হয়।
যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, এইডস আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা জনসাধারণের জন্যে একটি সতর্ক বার্তা বা অ্যালার্ম। আক্রান্তদের অনেকেই ভারত এবং বাংলাদেশ বসবাস করেন। চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে আট জনের শরীরে এইডস্ শনাক্ত হয়েছে যেটি বিশেষজ্ঞদের কাছে অস্বাভাবিক এবং সতর্কবার্তা বলে মনে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ জেলায় মোট ১৭ জন এইডস্ আক্রান্ত রোগী রয়েছে।
তিনি আরও জানান, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সরকারিভাবে চিকিৎসার জন্যে থেরাপি সেন্টার নেই। খুলনা মেডিকেল কলেজে এ সেন্টার আছে সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
যশোর সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, 'উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে যশোরের এইডস রোগীর সংখ্যা। গত ৩৫ দিনে যশোরের ৮ জনের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে। তারা সবাই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ইতিমধ্যে আমরা জরুরী ভিত্তিতে এইডস রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য আবেদন করেছি। খুব দ্রুত আমরা যশোরে এইডস্ রোগীদের চিকিৎসা করবো।
তিনি আরও বলেন, সীমান্ত এলাকা হওয়ায় আমরা ঝুকিতে আছি বেশি। আমরা দ্রুত পরীক্ষা-নিরিক্ষা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।