ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

মৃত্যুর আগে হত্যাকারির নাম জানিয়ে গেলেন চেয়ারম্যান

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: রবিবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২

মৃত্যুর আগে হত্যাকারির নাম জানিয়ে গেলেন চেয়ারম্যান
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান বাবলু সরকার (৪৫)। বাড়ি উপজেলার চৈথট্র গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) তাকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা। এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টম্বর) রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান। তবে মৃত্যুর আগে হত্যাকারিদের মধ্যে খালেক নামে একজনের নাম বলে গেছেন। খালেকের বাড়ি পাশ্ববর্তী পাঞ্জানা গ্রামে।

প্যানেল চেয়ারম্যান বাবলুর পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার দিন বিকেলে বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে তার ভাতিজিকে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা থেকে দেখতে আসে বরপক্ষ। কাজে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন বাবলু। বারবার কল আসছিল তার মোবাইলে। কে এতো ফোন করে? এমন প্রশ্ন করছিলেন তার বড় ভাই ইয়ার মাহমুদ। জবাবে সে জানায়, দুলাল মাস্টার এবং রিপন তাকে ফোন করছে। পাকুটিয়া যেতে বলছে। দুলাল এবং রিপনের সঙ্গে সখ্যতা ছিল বাবলুর।

অনুষ্ঠানের কাজ ফেলে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পাকুটিয়ার দিকে রওনা দেন তিনি। যাওয়ার সময় তার বড় ভাইকে জানায় দুলাল মাস্টার তার এক জমি সংক্রান্ত বিষয়ে উকিলের কাছে যাবেন তাকে সঙ্গে নিয়ে। বিষয়টা নাকি জরুরি। দুলাল হোসেন স্থানীয় পাঞ্জানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং রিপন মিয়া দেওউলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজাত আলী খানের ভাগিনা। পাকুটিয়া বাসস্ট্যান্ডে রিপনের ডেকোরেটরের ব্যবসা রয়েছে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বাবলুকে ওই ডেকোরেটরের দোকানে বসে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। রাত ৮ টার দিকে ভাতিজির বিয়ের খোঁজ-খবর নিতে ভাতিজা আবু সাইদকে ফোন করেন বাবলু। আবু সাইদ জানায়, বিয়ে ঠিক হয়েছে। এ খবর তার চাচাকে দিলে তিনি খুশি হন এবং সে গাড়িতে করে টাঙ্গাইল যাচ্ছেন বলে তাকে জানায়। এরপর আর কারো সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।

বাবলুর বড় ভাই ইয়ার মাহমুদ বলেন, রাত নয়টার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতাল থেকে এক লোক ফোন করেন বাবলুর মেয়ে লাবনীর কাছে। ফোনের ওপাশ থেকে লোকটা জানায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বাবলুকে। খবর পেয়ে সেখানে যান তিনিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। পরে ওই রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকে নিয়ে যেতে বলেন ডাক্তার। ভর্তি করান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এসডিওতে।

ইয়ার মাহমুদ আরও বলেন, তার ভাইকে যারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন তারা ওই সময় জানান, মির্জাপুর উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে প্রায় মৃত অবস্থায় পড়েছিল বাবলু। সেখান থেকে তারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং বাবলুর পকেট থেকে ফোন বের করে বাড়ির নম্বরে ফোন করে।

তিনি আরও বলেন, তার ভাইকে হাঁতুড়ি ও রঢ দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে পাঞ্জানা গ্রামে খালেক, মালেক ও মোতালেবের বাড়িতে এক সালিশ করেছিল বাবলু সেই সময় থেকেই তাদের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি হয়।

বাবলুর ভাতিজা আবু সাইদ জানান, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন চাচা। পাশে থেকে চাচার সেই কথা মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বলছেন তাকে মেরেছে পাঞ্জনা গ্রামের খালেক। এতটুকু বলার পর মুখ দিয়ে আর কথা বের হচ্ছিল না তার।

বাবলুর স্ত্রী শাহিনা বেগম জানান, তার স্বামীকে দেখতে ঢামেকে গিয়েছিলেন দুলাল মাস্টার। সেখানে ফোন করার কথা বলে দুলাল মাস্টারের মোবাইল নিয়ে নেন তিনি। ফোন তার হাতে রেখে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসেন দুলাল। এরপর থেকেই তিনি পলাতক। মোবাইল ঘেটে দেখা যায় ঘটনার দিনের সব ধরনের তথ্য মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছেন দুলাল। মোবাইলটি এখনো তাদের হেফাজতে আছে বলে জানান শাহিনা।

পাঞ্জানা সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, গেল সপ্তাহের পুরো কর্মদিবসেই প্রধান শিক্ষক দুলাল হোসেনের হাজিরা খাতায় সাক্ষর রয়েছে, তবে স্কুলে বেশি সময় থাকতেন না তিনি।

দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজাত আলী খান জানান, বাবলু সরকার তার পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন। ঘটনার ওই রাতেই তিনি পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে নাকি জানানো হয়েছিল যেহেতু চিকিৎসাধীন রয়েছে তাই সুস্থ্য হলে পরবর্তীতে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, ঘটনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।