ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

গায়ের জোরে অধ্যক্ষের পদ আঁকড়ে আছেন আতিয়ার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি | আপডেট: রবিবার, আগস্ট ২৮, ২০২২

গায়ের জোরে অধ্যক্ষের পদ আঁকড়ে আছেন আতিয়ার
কলেজে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আছেন। নিয়মে না থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের ডিঙিয়ে কলেজ পরিচালনা কমিটিকে 'ম্যানেজ' করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কুষ্টিয়ার মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ আঁকড়ে আছেন কলেজটির সহকারী অধ্যাপক আতিয়ার রহমান। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। 

গত ৪ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক আতিয়ার রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে দায়িত্ব পালনে বিরত ও পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই বলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। একই সাথে সাতদিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দায়িত্ব প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করতেও ওই চিঠিতে বলা হয় তাকে।

এরপরও তিনি গায়ের জোরে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ আগলে রেখেছেন। অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া ও অন্যান্য প্রক্রিয়াসহ ঢিলেঢালা নানান অজুহাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদটি তার দখলে। এতে ক্ষোভ-প্রকাশ করেছেন কলেজটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সচেতন মহলও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমিরুল ইসলামকে নানাভাবে  ভয়ভীতি দেখিয়ে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। তারপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে আমিরুল ইসলাম সরে গেলে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর কলেজ পরিচালনা কমিটি ও সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূতভাবে সহকারী অধ্যাপক আতিয়ার রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ বাগিয়ে নেন। 

কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বলছে, জীববিজ্ঞান বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত না থাকায় জীববিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আতিয়ার রহমানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার যোগ্যতা ছিল না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের ২০১৫ সালের প্রণীত (সংশোধিত) বিধির ৪ এর (ক) ৩ অনুযায়ী, অধ্যক্ষের পদ শূন্য হলে উপাধ্যক্ষ কিংবা প্রথম জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের মধ্য থেকে একজনকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে পারবে কলেজ পরিচালনা কমিটি।

সেখানে সব নিয়মকে ডিঙিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্তর্বর্তীকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ আঁকড়ে ধরে আছেন আতিয়ার রহমান। 

এ ব্যাপারে মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমিরুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও কথিত ব্যক্তিদের পেশিশক্তি ও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর কারণেই সম্মান নিয়ে বাঁচতে পদটি থেকে সরে এসেছি। আমারও চাকরির বয়সসীমা শেষ হয়েছে তাই নতুন করে কোনো প্রকার ঝামেলায় জড়ায়নি। তবে আতিয়ার রহমান অধ্যক্ষ পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এটি তাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সুস্পষ্টভাবে জানিয়েদিয়েছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজটির সহকারী অধ্যাপক আতিয়ার রহমান বলেন, আমি ২০২২ সালের ২৯ মার্চ অবসরে গিয়েছি। তবুও ভারপ্রাপ্ত  অধ্যক্ষের হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমাকে কলেজটির সভাপতি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তাকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়। কলেজটির সভাপতি বললে আছি, না বলবে নাই।

মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শাহজাহান আলী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলুন তিনিই সব বলতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে চাই না। 

মিরপুর উপজেলা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল করিম বলেন,শিক্ষাঙ্গনে এমনটি সত্যি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে অনেক কিছুই আমাদের জানা। বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা এর প্রতিকার চাই।

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিদর্শনা কেন মানা হয়নি তার জবাব চাওয়া হবে। তাদের গায়ের জোরে কথা বলা চলবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।