ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, নভেম্বর ৫, ২০২৪ |

EN

সিনেমা নির্মাণের নামে কীভাবে লোপাট হয় সরকারি অনুদানের টাকা

বিনোদন ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ২৭, ২০২২

সিনেমা নির্মাণের নামে কীভাবে লোপাট হয় সরকারি অনুদানের টাকা
সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘আশীর্বাদ’ সিনেমা নিয়ে সমালোচনা যেন কিছুতেই থামছে না। গত ১১ আগস্ট সিনেমার মুক্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিনেতা জিয়াউল রোশান ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস। এরপর ১৮ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে প্রযোজকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেন মাহি।

প্রযোজক-অভিনেত্রীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তীক্ততা পর্যন্ত পৌঁছালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। গত ২৩ আগস্ট প্রযোজক জেনিফার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে অভিযোগপত্র জমা দেন অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। একই দিন বিকেলে বিএফডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, চিত্রনায়িকা মাহি ও চিত্রনায়ক রোশানের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন জেনিফার ফেরদৌস।

এরপর সিনেমা মুক্তির আগের দিন অর্থাৎ ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, প্রযোজক ও পরিচালকদের সহায়তায় ‘আশীর্বাদ’ সিনেমার কলাকুশলীদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের অবসান হয়। এখানেই শেষ হলে হতে পারতো। কিন্তু এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের সময়ে একটি ফোন রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে সিনেমায় অনিয়ম ও অনুদানের বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায় মাহিকে।

মাহির কল রেকর্ডে উঠে আসে সরকারি অনুদান নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে অবহেলার বিষয়গুলো। অন্যান্য যেসব চলচ্চিত্রের শুটিং ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়, সেখানে এই আশীর্বাদ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে মোবাইল ফোন। অনুদান হওয়ায় কলাকুশলীদের পারিশ্রমিকও অনেক কম দেয়ার বিষয়। এছাড়া যেভাবে নির্মাণ হওয়ার কথা সেভাবে না করে কার্পণ্যতা করার বিষয়গুলোও উঠে আসে কল রেকর্ডে।

মাহিয়া মাহি বলেন, “পুরো সিনেমায় বিহাইন্ড দ্যা সিনের শুটিং হয়েছে। প্রতিটি সিনেমায় দেখেছি ক্যামেরা দিয়ে শুটিং হয়। এই সিনেমায় দেখেছি রিফাতের একটি মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও করতেছে। এই হচ্ছে আমাদের বিহাইন্ড দ্যা সিন। চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে তুলনা করেন, এটা কখনো বলতে পারেন উনি (জেনিফার ফেরদৌস)। তিনি যদি এমনই হতো তাহলে তিনি সিনেমার জন্য কম্প্রোমাইজ কেন করল? তাহলে চঞ্চল চৌধুরী, ওনাদেরকেই নিতো। আমাদের কেন নিলো? চঞ্চল চৌধুর কোনো সমস্যা না। তিনি কম্পেয়ার করতে যেয়ে একদম মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলছে আমাদের। এটা খুবই খারাপ হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যে সিনেমার প্রচারণার কোনো প্ল্যান থাকবে না। কোনো রকম ফেসবুকে একটা ছবি আপলোড করে বলবে এটাই পোস্টার এবং এত... তারিখ রিলিজ!”

মাহি বলেন, “আর্টিস্টদের এভাবে সবার সামনে ছোট করে কথা বললো, এটা তো দুঃখজনক। চঞ্চল চৌধুরী-মেজবাউর রহমান সুমনকে দেখেছেন আপনারা, এখানে প্রোডিউসার কোনো কথা বলছে? তার (জেনিফার ফেরদৌস) একটি ভিডিও দেখলাম। সেখানে উনি বলছেন, সিনেমার আর্টিস্টরা হচ্ছে সবার পরে। আমি আছি, ডিরেক্টর আছে, আমরা গুরুত্বপূর্ণ। ডিরেক্টর গুরুত্বপূর্ণ, প্রযোজক কেন হবেন? সিনেমার প্রচারণার জন্য ডিরেক্টর এবং আর্টিস্টরা থাকবে। ডিরেক্টর নিজেও একবার পোস্টার আপলোড করে বোধ হয় আর করেনি।”

এই অভিনেত্রী বলেন, “প্রযোজক একা একা প্ল্যান করতে পারে, কখন রিলিজ দেবে, কি করবে? তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলছে, আমি কি হিরো-হিরোইনের প্রচারণা করব নাকি? সিনেমার সংবাদ সম্মেলনে কি হিরো-হিরোইনের প্রচারণা হয় কোনোদিন? আমি খুবই অবাক হয়ে গেলাম। এর ব্যাখ্যা কিভাবে দেব। তিনি যেভাবে হিরো-হিরোইনদের ছোট করে কথা বলছেন, কেউ নিজের সিনেমার আর্টিস্টদের এভাবে কথা বলে কি?”

তিনি বলেন, “এটি অনুদানের সিনেমা এবং আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সবাই অনেক মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছে, ডেডিকেশন ছিল। যারা দশ টাকার আর্টিস্ট তারা ১ টাকায় কাজ করেছে। সবাই খুব কম্প্রোমাইজ করে কাজ করেছে, কারণ এটা অনুদানের সিনেমা। আমার এবং রোশানের দু’জনেরই প্রথম অনুদানের সিনেমা।”

‘অগ্নি’ সিনেমার এই অভিনেত্রী বলেন, “প্রথম থেকেই আমরা ওনার প্রতি খুবই বিরক্ত। প্রথম যেদিন আমি ও রোশান সিনেমার সাইন করতে তার (প্রযোজক) বাসায় যাই। সব সময় হিরো-হিরোইনদের নতুন ছবির বিষয়ে নিউজ হয়। আমরা যখন দু’জন ছবি তুলতে গেছি তখন আমাদের না করেন। বলেন, না এই ছবি তুলবে না। উনি মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে ও তারপরে ছবি তুলেছে এবং ছবি সিলেক্ট করে দিয়েছে। বলেছে, এই ছবি ছাড়া ফেসবুকে কেউ ছবি আপলোড করবে না। ওই একটা ছবিই যাতে নিউজে যায়, যেটাতে উনি আছে।”

মাহি বলেন, “কত সিনেমাই তো করলাম। এভাবে কখনো কোনো প্রযোজক তো করে না। কিন্তু তিনি আমাদের নিষেধ করে, তিনি ছাড়া কেউ ছবি আপলোড করতে পারবে না। এই সিনেমা কিন্তু এভাবে হওয়ার কথা ছিল না। একটা অনুদানের সিনেমা, ৬০ লাখ টাকা অনুদান। খুব কম সিনেমায়ই বাজেট বেশি দেয় বলে জানি। অনুদানের একটা সিনেমা এভাবে ঠোঁকাইভাবে কাজ হবে, এটা তো হতে পারে না।”

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৬ আগস্ট) দেশের আটটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘আশীর্বাদ’ সিনেমা। হলগুলো হলো চিত্রামহল (ঢাকা), সৈনিক ক্লাব (ক্লাব), উল্কা (জয়দেবপুর), গুলশান (নারায়নগঞ্জ), চন্দ্রিমা (শ্রীপুর), নন্দিতা (সিলেট), বুম্বাই (বগুড়া), সিনেমা প্যালেস (চট্টগ্রাম)।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে সরকারি অনুদান পাওয়া আশীর্বাদ সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের। চিত্রনাট্য লিখেছেন প্রযোজক নিজেই। সিনেমাটিতে রোশান-মাহি ছাড়াও অভিনয় করেছেন কাজী হায়াৎ, রেহানা জোলি, রেবেকা, শাহনূর, অরণ্য বিজয়, হারুন রশিদ, সায়েম আহমেদ, সীমান্ত, শিশুশিল্পী জেনিলিয়া, আরিয়ান সহ আরো অনেকে। সংলাপ লিখেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু।