শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের সহযোগীতা ও আশ্বাসে কিছু কিছু চা বাগানে চা শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছে। (২৩ আগস্ট) মঙ্গলবার সকাল ১১ ঘটিকা থেকে উপজেলার কিছু কিছু বাাগানের আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা চা- পাতা তোলার কাজে যোগদান করেন। মঙ্গলবার সকাল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা কালিঘাট ইউনিয়নের ভাড়াউড়া চা বাগানে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সাপার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, উপ-শ্রম পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট সার্কেলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুনসহ বাগান পঞ্চায়াত নেতারা বিভিন্ন বাগানের উপস্থিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ রাখারা জন্য সাধারণ চা শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্ঠা করেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার জেরিন চা বাগানে শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আাহসান চা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ভালো নেই আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রীও জানেন আপনাদের কষ্টের কথা, আমরা আপনাদের সকল অভিযোগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর পাঠিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনাদের সাথে কথা বলবেন। আশা করি দুর্গাপূজার আগে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এখন আপনারা কাজে ফেরেন। তিনি আরো বলেন, এক শ্রেনির দুষ্টলোক আপনাদের ভালো চায়না। তারা চায়না বিষয়টি সমাধান হোক।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, আমরা শোনেছি কারা আপনাদের ভয়ভিতি দেখাচ্ছেন। আপনাদের ভয় নেই আপনারা নির্ভিগ্নে কাজে ফেরেন। খুব শিগ্রিই আপনাদের সমস্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমাধান করে দিবেন।
এসময় উপস্তিত প্রশাসনসহ নেতারা জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের ন্যায় মজুরীর দাবীর বিষয়ে শ্রীমকদের সাথে আলাপ প্রধানমন্ত্রী চুরাস্ত সিদ্ধান্ত দিবেন। এবং তারা সাধারণ শ্রমিকদের কোন গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আহবাণ জানান।
জানাযায়, নেতাহীন চা বাগানে এখনো সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে নানান, ক্ষোভ, ভয় এবং ভ্র্যারাান্তি এ দ্বিধাবিভক্তি কাজ করছে।
এসময় সাধারণ চা শ্রমিকরা বলেন, আপনারা এসেছেন, আমরা খুশি হয়ে আজ থেকেই কাজে যোগ দিব। ভাড়াউড়া চা বাগান পঞ্চায়াত সভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহবাণ জানিয়েছি। এখন শ্রমিকরা প্রতিদিন কাজ করবে।
এরইমধ্যে দেখাযায় উপজেলার ভাউউড়া, জেরিনসহ বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা য়ায় এবং আরো কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছে বলে জানাযায়।
এছাড়া কালিঘাট চা বাগান, ফুলছড়াসহ বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকদের বুঝানো চেষ্ঠা করছেন এবং কোন কোন বাগানের পাঞ্চায়াত নেতারা কাজে যোগদানের আশ্বাস প্রদান করছেন। এবং কোন কোন বাগানের শ্রমিকরা তাদের দাবী না মানা হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ দিবেনা বলে জানান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন জানান, ভাড়াউড়া, জেরিণ, কালিঘাট চা বাগান, ফুলছড়াসহ বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকদের বুঝানো চেষ্ঠা করছেন এবং কোন কোন বাগানের পাঞ্চায়াত নেতারা কাজে যোগদানের আশ^াস প্রদান করছেন। এবং কোন কোন বাগানের শ্রমিকরা তাদের দাবী না মানা হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ দিবেনা বলে জানান। প্রশাসনও আশা করছে শ্রমিকরা আস্তে আস্তে কাজে যোগদান করবে।
এর আগে সাধারণ চা শ্রমিকরা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ পত্যাখান করে ৩শ টাকা মজুরীর দাবীতে এখনো কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমস্ত্রীর অনুরোধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গত রাতের মিটিং এ অংশগ্রহণকারী শ্রীমকদের নেতাদের দালাল, চিটার এবং ধান্ধাবাজ বলে শ্লোগান দিচ্ছে। এবং রাতের অন্ধকারে কোন চুক্তি তারা মানে না এবং মানবেও বলে শ্লোগান দিচ্ছে।
তবে আন্দোলনকারী শ্রমিক নেতা কালিঘাট পঞ্চায়াত সভাপতি অবান তাতীঁ জানান, দাবী প্রধানমন্ত্রী যদি ভিডিও কানফারেন্সে, বা টেলিভিশনে অথবা কোন লাইভে এসে তাদের দাবীর প্রতি সরাসরি বক্তব্য রাখেন এবং বলেন, তিনি তাদের মজুরীর একটি স্থায়ী সমাধান দিবেন তাহলে তারা কাজে যোদ দিবে। নয়তো বা তারা কাজে যোগ দিবেন। তারা তাদের কোন নেতা বা কোন রাজনৈতিক নেতাদের তারা বিশ্বাসে করেন না।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখায় চা দল বন্ধ হয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছে। এবং কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটছে। দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ঢাকা-সিলেট-মৌলভীবাজার আঞ্চালিক মহা সড়কের লছনা ও শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের কিছু সময় চা শ্রমিকরা বন্ধ করে রাখে।
সাধারণ শ্রমিকরা আরো বিম্মত (বিশমিত) হন যেখানে প্রধানমস্ত্রী আগে যেখানে ১৪৫ টাকা মজুরী নির্ধারণ করে দেন, সেখান রাতের গোপন সমঝোতায় আবার আগের মজুরী ১২০ টাকা হলো কি করে। এতে তারা আারোবিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং তা তারা তাদের নেতাদের কাছ থেকে জানতে চান।
জানাযায়, সোমবার (২২ আগস্ট) ৯টায় রাতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চা-বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে জরুরী বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। ওই সভা শেষ হয় রাত দেড় টায়।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এরর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সাপার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, উপ-শ্রম পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী, বালিশরা পঞ্চায়াত সভাপতি বিজয় হাজরাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্য শ্রমিক নেতারা। পরে যৌথ বিবৃতিতে তারা ৫ টি দাবী গ্রহণের মাধ্যমে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
সভার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো-
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তার সম্মানে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ২২ আগস্ট থেকে কাজে যোগদান করবেন।
আপাতত চলমান মজুরি অর্থাৎ ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকগণ কাজে যোগদান করবেন। এবং মাননীয় প্রধানমস্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্স পরবর্তীতে মজুরীর বিষয়টি সদয় বিবেচনার পর চুরান্তভাবে নির্ধারণ হবে মর্মে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বাদী জানান।
আসন্ন সারধীয় দুর্গাপুজার পূর্বে প্রধানমস্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আবেদন করবেন যা জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রধানমস্ত্রী কার্যালয়ে উপস্থাপিত হবে।
চা-শ্রমিকদের অন্যান্য দাবী সমুহ লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করবেন। জেলা প্রশাসক প্রধানমস্ত্রীর সদয় বিবেচনার জন্য দাবীসমূহ প্রধানমস্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন।
এবং বাগান মালিকগণ বাগানের প্রচলিত প্রথা/দপ্তর মোতাবেক ধর্মঘটকালীন মজুরী শ্রমিকগণকে পরিশোধ করবেন।
এ সমঝোতাও ঘোষণার পর সোমবার সকালে শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগদেন। এবং কাজের মাঝ পর্যায়ে তাদের কাছে খবর আসে কালিঘাট চা বাগানে মারামারি হচ্ছে। যারা কাজে যোগ দিচ্ছে তাদের মারা হচ্ছে। মিছিল নিয়ে ভাড়াউড়া চা বাগানের দিকে আসছে। এ খবরে মহিলা শ্রমিকরা কাজ পেলে ভিত সংংস্ত্রস্ত হয়ে তারা কাজ পেলে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে। খবর পেয়ে উপেিজরা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন ও শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ শামীম উর রশীদ তালুকতার ভাড়াউড়া চা বাগানে গিয়ে শ্রীমকদের সাথে কথা বলেন এবং তার আশ্বাস্ত করেন প্রধানমস্ত্রী চা শ্রমিকদের মজুরীর বিষয়ে স্থায়ী একটি সমাধান দিবেন। পরে তারা কালিঘাট যেতে চাইলে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের শ্রমিকদের দেখতে পেয়ে তাদের বুঝানো চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হন।
দিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, প্রধানমস্ত্রীই আমাদের একামাত্র ভরসা। তারা প্রধানমস্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। কিছু চা শ্রমিক তাদের ভূল বুঝে এখন তারা এখন সাধারণ শ্রমিকদের প্রতিপক্ষ হয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন প্রশাসনও তাদের একটু সময় দিতে চায়, শ্রমিকরা বলেছে তারা নাকি রাতে আধারে সমঝোতা করছে, এখন গালি শুনছেন। রাতে এভাবে মিটিং না করে একটু সময় নিয়ে করলে হয়তো এখন এ সমস্যা হতো না।