সিরাজগঞ্জের নরিনা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নরিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শামসুল আলম ২০২২ সালের উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বরাদ্দকৃত ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর কয়েক হাজার কপি বই গোপনে বিক্রি করে সব অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে এবং সব টাকা একা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে প্রধান শিক্ষক শিক্ষা অফিসের অনুমতিও নেননি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের সাথে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা না করেই সরকারি বিধি লংঘন করে গোডাউনে থাকা সব বই বিক্রি করেছেন এই শিক্ষক।
এদিকে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক একজন সার্টিফিকেট বিক্রেতা, কিছু টাকা দিলেই ওনার কাছে পাওয়া যায় বিভিন্ন শ্রেণীর প্রশংসাপত্র। এমনকি বিভিন্ন সময়ের শিক্ষার্থীদের নাম সংশোধন ও সার্টিফিকেট, মার্কশিট এর সংশোধনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ব্যাংক ড্রাফটের অতিরিক্ত কয়েক ডাবল অর্থ আদায় করে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চলতি আগস্ট মাসে জাতীয় শোক দিবস সহ বেশ কয়েকটি সরকারি ছুটি থাকার সুযোগ নিয়ে নরিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রিপন এর সহযোগিতায় ২০২২ সালের উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রাপ্ত বই শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গভাবে না দিয়ে দীর্ঘদিন গোডাউনে আটকে রেখে নগদ অর্থে বিক্রি করে দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অভিমান করে বলেন, আমাদের সবগুলো বিষয়ের পাঠ্যবই এখনো স্কুল থেকে পাইনি। অথচ আমাদেরকে পড়ার বই না দিয়ে গোডাউনে আটকে রেখে প্রধান শিক্ষক কি করে বিক্রি করতে পারলেন! বিষয়টি সত্যি লজ্জাজনক।
নরিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, কয়েক দিন স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে প্রধান শিক্ষক একক সিদ্ধান্তে বই বিক্রি করে দিয়েছেন। সত্যি বলতে আমাদের সঙ্গে এবং শিক্ষা অফিস বা ম্যানেজিং কমিটির অগোচরেই এ কাজটি করেছেন তিনি।
নরিনা গ্রামের কয়েকজন প্রধান ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই প্রধান শিক্ষক স্কুলে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা করে বেড়াচ্ছেন না। তিনি ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটির সম্মানহানি করছেন বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। গোপনে বই বিক্রির এ বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করে যেকোনো সময় মিছিল-মিটিং বা মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করতে পারেন বলে তারা জানান।
স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি দ্রুত রুম থেকে বিল্ডিং এর উপরে গিয়ে বাথরুমে দীর্ঘক্ষণ কাটান, সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে বলে দীর্ঘসময় পর নীচে এসে ক্যামেরার সামনে কথা বলবেন না বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল ইসলাম বলেন, "সরকারি বই কোনক্রমেই বিক্রি করতে পারেন না তিনি। যদি সত্যি তিনি এ ধরনের কাজ করে থাকেন তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে নরিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বই বিক্রি করায় এলাকাবাসী ফুসে উঠেছে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তারা প্রশাসনের নিকট আশু পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।