নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৫, ২০২১
চলমান
কঠোর বিনিষেধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) চাল কিনতে ভিড়
করছেন ঝালকাঠির কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন
ও মধ্যম আয়ের মানুষ। চাহিদা
থাকলেও জোগান না বাড়ায় দীর্ঘসময়
লাইনে দাঁড়িয়েও খালি হাতে ফিরতে
হচ্ছে অনেককে। এতে বিপাকে পড়েছেন
তারা।
জেলা খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলা শহরে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে চাল ও আটা বিক্রির জন্য ১০ জন ডিলার রয়েছেন। ডিলারপ্রতি ৫০০ কেজি চাল ও ৫০০ কেজি আটা বরাদ্দ দেয়া হয়।
অন্যদিকে করোনা মহামারির কারণে নলছিটি পৌর এলাকায় চাল-আটা বিক্রির জন্য চারজন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে তিনজন ডিলার ক্রমানুসারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করেন। প্রত্যেক ডিলার সাড়ে ৪০০ কেজি চাল ও ৩০০ কেজি আটা বরাদ্দ পাচ্ছেন, যা দিয়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের চাহিদা মেটানো শতভাগ সম্ভব হয় না।
এদিকে, নলছিটি উপজেলায় আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত ওএমএস’র চাল-আটা বিক্রির বরাদ্দ রয়েছে। অথচ কঠোর বিধিনিষেধের সময়সীমা ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বুধবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঝালকাঠির বিভিন্ন ওএমএস কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি আলাদা লম্বা লাইনে নারী ও পুরুষদের ভিড়। চাল-আটা কিনতে দাঁড়িয়ে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশের পরিবারেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চাকরি হারিয়েছেন। যে কারণে কম দামে চাল-আটা কিনতে ওএমএস কেন্দ্রে ভিড় করছেন।
বেলা ১১টার দিকে বাসন্ডা এলাকার যুব উন্নয়নের সামনে খোলাবাজারে লাইনে দাঁড়ান শাহনাজ বেগম নামের এক নারী। অস্থির চোখে সামনে তাকাচ্ছিলেন। বুঝতে চাইছিলেন চাল পাবেন কি-না।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী পরিবহন শ্রমিক। লকডাউনের কারণে পরিবহন বন্ধ। আয়-রোজগারের কোনো পথও নেই। চার বাচ্চা ঘরে। পরিবারে দিনে আড়াই কেজি চাল লাগে। সকালে বাচ্চাদের সামলে কেন্দ্রে আসতে ১১টা বেজে যায়। এরপর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এর আগে কয়েকবার এসে চাল নিতে পারিনি। আজ পাব কি-না জানি না।’
শাহনাজ বলেন, ‘আমরা তো খাই শুধু ভাতই। অন্যকিছু কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নাই। এই চালও ঠিকমতো পাই না। এখানে (ওএমএস কেন্দ্র) একদিন পাইলে আরেক দিন পাই না। খালি হাতে ফেরত যেতে হয়। আজ ঘরে এক মুঠো চালও নাই। এখানে ১টা বাজলেই চাল শেষ হয়ে যায়। যদি চাল না পাই তাহলে বাইরে থেকে কেনার সামর্থ্য আমার নাই। তখন বাচ্চাগুলোরে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’
কির্ত্তীপাশা বটতলা এলাকা থেকে চাল কিনতে ওএমএস কেন্দ্রে আসেন আছিয়া আক্তার নামে স্বামীহারা এক নারী। তিনি বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে কাজ করতাম। লকডাউনে সে কাজও নাই। উপায় না পেয়ে সোমবার এখানে এসেছিলাম চাল-আটা কিনতে, পাইনি। পরে বাজার থেকে কিনে নিয়েছিলাম। আজ আবার আসলাম, জানি না পাব কি-না।”
চালের জন্য লাইনে দাঁড়ানো দিনমজুর মো. হাসান বলেন, ‘এখন একেবারেই কাজ নাই। যে কয়েকটা টাকা জমানো ছিল, তা নিয়ে আসলাম চাল কিনতে। পাব কি-না জানি না। দুদিন এখানে এসে লাইনে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু চাল পাইনি।”
ওএমএস’র ডিলারদের দাবি, কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর আগে শহরের ১০টি ওএমএস কেন্দ্র ও ট্রাকে যে পরিমাণ বরাদ্দ ছিল, তা বাড়ানো হয়নি। যে কারণে এসব চাল ও আটার চাহিদাসম্পন্ন লোকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ওএমএস’র বাসন্ডা কেন্দ্রের ডিলার মো. নান্না মিয়া বলেন, ‘চাল-আটার জন্য কয়েক দিন ধরে ভিড় বেড়েছে। লকডাউনের আগে ততটা ছিল না। আগে বিক্রি বিকেল পর্যন্ত চলত, এখন দুপুরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।’
সবার না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে প্রতিদিন এক হাজার কেজি (১ টন) চাল ও এক হাজার কেজি (১ টন) আটা বরাদ্দ থাকে, যা প্রতিদিন পাঁচজন ডিলারের দেয়ার নিয়ম কিন্তু সুষম বণ্টনের দিকে তাকিয়ে ১০ জন ডিলারকে ৫০০ কেজি চাল ও ৫০০ কেজি আটা ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। যতক্ষণ এগুলো থাকবে ততক্ষণ বিক্রি চলবে।’
ঝালকাঠি খাদ্য অধিদফতরের জেলা কর্মকর্তা মোহাম্মদ তানভীর হোসেন জানান, জেলা শহরে ১০ জন ডিলারের মাধ্যমে পাঁচ টন চাল ও পাঁচ টন আটা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি চালের দাম ৩০ টাকা ও প্রতি কেজি আটার দাম ১৮ টাকা। প্রতিজন পাঁচ কেজি পণ্য কিনতে পারবেন। পৌর এলাকার সর্বত্র এ সুবিধা দিতে পাঁচজন ডিলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ১০ জন ডিলার দিয়েই ওএমএস ব্যবস্থাপনা চলছে।
অন্যদিকে নলছিটিতে চারজন ডিলারের মধ্যে প্রতিদিন ক্রমানুসারে তিনজন ডিলার পণ্য বিক্রি করছেন। যে পরিমাণ বরাদ্দ রয়েছে তাতে চাহিদার সংকুলান হচ্ছে না। জেলা শহরের কার্যক্রম চলমান থাকলেও নলছিটিতে থাকছে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত।
সদর
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবেকুন্নাহার জানান, কয়েক দিন আগে
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
থেকে করোনায় কর্মহীন মানুষের জন্য যা পেয়েছি
তা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিতরণ করা
হয়েছে। পাশাপাশি কেউ যদি ৩৩৩-এ কল দিয়ে
খাদ্যসামগ্রীর জন্য আবেদন করেন
তাহলে ওই ব্যক্তির খাদ্যসামগ্রী
দ্রুত তার কাছে পৌঁছে
দেয়া হচ্ছে।
সুত্র: জাগোনিউজ