সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দুই সুদখোরের সুদের টাকার চাপ সইতে না পেরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ফয়সাল আহমদ সৌরভ (২৩ ) নামের এক যুবক গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার চার মাস বয়সী মেয়ে সন্তান আছে।
ফয়সাল আহমদ উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের পাতারি গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যার পর রক্তি নদীর তীরে এই ঘটনা ঘটে। ফয়সাল ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে বালি পাথর পরিবহনের ব্যবসা করতেন। সুদের টাকা পরিশোধ না করায় তার নৌকা আটকে রেখেছে রফিক মিয়া নামের এক সুদখোর।
জানা গেছে, ফয়সাল আহমদ সৌরভ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় নিজের ফেসবুক আইডি থেকে রফিক ও সফিক নামের দুই সুদখোরের সুদের টাকার চাপে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে বলে পোস্ট দেয়।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি গলায় দড়ি দিলাম তোই রফিকের লাগি, তোই আমারে কাবু করিয়া লাশ বানাইলি, তোই ভাল থাক বেইমান। সফিকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা আনছিলাম সুদে। তিন লাখ টাকা সুদ দিয়েও সাড়ে তিন লক্ষ এখনও পায়।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এই রফিক আর সফিকের লাগি আত্মহত্যা করলাম, ভাল থাক আমার পরিবার। মা ফাইজা আমায় ক্ষমা করো। মা-বাবা, ভাই-বোন তোমারা ক্ষমা করিয়। বউ তোমাকে কিছু বলার নাই।’ ইতি এক কাপুরুষ!!!
পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী ফয়সালের ফেসবুক পোস্ট দেখে খোঁজাখুঁজি শুরু করলে ঘণ্টাখানেক পরে পাতারি গ্রামের পাশের রক্তি নদীর তীরে একটি গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। সেখান থেকে দ্রুত উদ্ধার করে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফয়সাল আহমদ সৌরভের চাচাতো ভাই বালিজুরি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলী নেওয়াজ জানিয়েছেন, ফেসবুক পোস্টে অভিযুক্ত সুদখোর সফিক মিয়া আনোয়ারপুর গ্রামের আবদুল কাহারের ছেলে ও রফিক মিয়া পার্শ্ববর্তী বাদাঘাট ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে । সুদের টাকার চাপে ফয়সাল আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
বালিজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাদ হোসেন বলেন, ফয়সাল আহমদ সৌরভ কয়েক দিন আগে আমাকে জানিয়েছিল রফিক ও সফিক সুদের টাকার জন্য তাকে চাপ দিচ্ছে । সুদের টাকার জন্য রফিক নাকি তার বাড়ির নৌকাটি আটকে রেখেছে। পরে আর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি। এ বিষয়ে ফয়সালের পরিবার আইনি পদক্ষেপ নিবেন।
এ বিষয়ে তাহিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, সুদখোরদের চাপে বালিজুরী ইউনিয়নের পাতারি গ্রামের এক যুবক আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। তার মরদেহ বিশ্বম্ভরপুর থানায় রয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রতিনিধি |
আপডেট:
শুক্রবার, আগস্ট ১৯, ২০২২ 
