বরগুনার আমতলীতে উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান এবং তার বড় ভাই পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মজিবর রহমানকে কুটুক্তি করে বক্তব্য দেয়া ও ফেইসবুকে লেখালেখির অভিযোগ এনে উপজেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের ৫ নেতা ও তার অনুসারীরা। গুরুত্বর আহত সেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে পৌর শহরের সাকিব প্লাজার সামনে। তাৎক্ষনিক ওই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা- কর্মীরা আমতলী- কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে ঘন্টাব্যাপী ওই সড়ক অবরোধ করে রাখে।
আহত ও স্থাণীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সকল প্রোগ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান এবং তার বড় ভাই পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মজিবুর রহমানকে সাবেক বিএনপি নেতা ও হাইব্রীড উল্লেখ করে উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খান ব্যাপক সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং ্এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লেখালেখিও করেন।
সর্বশেষ আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই গ্রæপ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পৃথক পৃথকভাবে পালন করেন। ওই দিন দলীয় শোকসভার আলোচনায় তাদের সমালোচনা ও কুটুক্তি করে বক্তব্য প্রদান করার এমন অভিযোগে মঙ্গলবার রাত অনুমান ৮টার দিকে পৌরশহরের তিন রাস্তার মোড়ে সাকিব প্লাজার সামনে বসে মেয়র অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা সবুজ মালাকার, ইসফাক আহমেদ তোহা, রাহাত মৃধা, সজিব প্যাদা ও সাহাবুদ্দিন শিহাবসহ তাদের ১০ থেকে ১৫ জন অনুসারী দেশিয় দাঁড়ালো অস্ত্র দিয়ে উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আমতলী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে ধাওয়া করে এলোপাথারী কোপাতে থাকে। আর বলতে থাকে মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও কুটুক্তি করে আর বক্তব্য দিবি। এমন দাবী আহত মোয়াজ্জেম হোসেন খানের। দাঁড়ালো অস্ত্রের আঘাতে মোয়াজ্জেম হোসেন খানের মাথায় ও হাতে মারাত্মক জখম করে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
পরে স্বজন ও স্থাণীয়রা মোয়াজ্জেম খানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমতলী চৌরান্তার গোল চত্ত¡রে উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা- কর্মীরা জড়ো হয়ে আমতলী- কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যানবাহনের দীর্ঘলাইন পড়ে যায়। খবর পেয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান পুলিশ নিয়ে বিক্ষুব্দ নেতা- কর্মীদের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করে। ওসি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করার আশ্বাস দিলে নেতা- কর্মীরা সড়ক থেকে তাদের অবরোধ তুলে নেয়। পরে চৌরাস্তায় পথসভা করে বিক্ষুব্দ নেতা- কর্মীরা। ওই পথসভায় বক্তব্য প্রদান করেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জিএম ওসমানী হাসান।
ওসমানী হাসান তার বক্তব্যে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ও তার ভাই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান তাদের অনুসারী সন্ত্রাসীদের দিয়ে একটার একটা ঘটনা ঘটিয়ে আমতলী পৌর শহরকে একটি সন্ত্রাসী জনপথ ও নরকের শহরে পরিণত করেছে। এছাড়া তাদের দু’ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নামে একটার একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী করছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের দু’ভাইয়ের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও কথা বলায় সাবেক ছাত্র ও যুবলীগ সভাপতি বর্তমানে উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের অনুসারী পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ প্রশাসন আমাদের কথা দিয়েছেন আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করবেন। যদি তারা তাদের কথা রাখতে ব্যর্থ হন তাহলে আজ (বুধবার) বিকেলে ওই ঘটনার প্রতিবাদে হরতালসহ আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করতে আমরা বাধ্য হবো বলে হুশিয়ারী দেয়। তিনি দলের সকল নেতা-কর্মীদের আজ বিকেলে চৌরান্তায় সমবেত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পথসভা সমাপ্ত করেন।
ওই ঘটনার পর থেকে শান্তি শৃংঙ্খলা বজায় রাখতে পৌরশহরে পুলিশের টহল বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শি মোঃ সেলিম বলেন, মেয়র অনুসারী সন্ত্রাসী সবুজ মালাকার, ইসফাক আহমেদ তোহা, রাহাত মৃধা, সজিব প্যাদা ও সাহাবুদ্দিন শিহাবসহ তাদের অনুসারী ১০ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী দেশিয় দাঁড়ালো অস্ত্র দিয়ে মোয়াজ্জেম খানকে কুপিয়ে আহত করেছে। পরে আহত মোয়াজ্জেম খানকে আমরা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাই।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সুমন বিশ্বাস বলেন, দাঁড়ালো অস্ত্রের আঘাতে আহতের হাতে ও মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে। অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
আহত সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন খান হাসপাতালে বসে বলেন, আমি কেন সাবেক বিএনপি নেতা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও তার ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বক্তব্য দেই এবং ফেইসবুকে লেখালেখি করি এজন্য মেয়র অনুসারী সন্ত্রাসী সবুজ মালাকার, ইসফাক আহমেদ তোহা, রাহাত মৃধা, সজিব প্যাদা ও সাহাবুদ্দিন শিহাবসহ তাদের অনুসারী ১০ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী দাঁড়ালো দেশিয় অস্ত্র দিয়ে আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে মাথায় ও হাতে কুপিয়েছে। এর আগেও একই সন্ত্রাসী বাহিনী মেয়র ও তার ভাইয়ের নির্দেশে আমাকে একাধিকবার শারিরীকভারে লাঞ্চিত করেছে।
এ ঘটনায় আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান মুঠোফোনে বলেন, এ ঘটনার সাথে আমি ও আমার বড় ভাই কোন অবস্থাতেই জড়িত না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য আমি প্রশাসনকে বলে দিয়েছি।
একটি বিশ্বস্থ্য সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ পূর্বে ছাত্রলীগ নেতা সবুজ মালাকার পৌরশহরের বটতলা নামক এলাকায় বসে তার অনুসারীদের নিয়ে মেয়র ও বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লেখালেখি করায় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল ইসলামকে দাঁড়ালো চাকু দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে নাজমুল ইসলামের মাথায় ১৮টি সেলাই দেয়া লাগছে। ওই ঘটনায় নাজমুল ইসলাম বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে আমতলীতে তার নিজ বাস বভনে অবস্থান করছেন।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, গত কালকের ওই ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন কাউকেই আমরা ছাড় দিবো না। জড়িতদের গ্রেফতার করার জন্য আমাদের পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে।