ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

চা শ্রমিকদের অনিদিষ্টকালের পূর্ণ দিবস ধর্মঘটের ঘোষণা

বিসিএস বলেছে এ আন্দোলন অন্যায় এবং অবৈধ


জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ১৩, ২০২২

চা শ্রমিকদের অনিদিষ্টকালের পূর্ণ দিবস ধর্মঘটের ঘোষণা
৩শ' টাকা মজুরীর দাবিতে মৌলভীবাজার জেলার সবক'টি চা বাগানে শ্রমিকরা দুই ঘন্টা কর্মবিরতির পরিবর্তে অনিদিষ্ঠকালের জন্য পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি শুরু করছে। এর আগে একই দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে চারদিন ধরে প্রতিদিন দুই ঘন্টা কর্ম বিরতি পালন করলেও বাগান কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নেয়ায় শ্রমিকরা শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি শুরু করেছে। 

শনিবার দুপুরে কয়েকশত শ্রমিক নিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন ভাড়াউড়া চা বাগানের বালিশিরা ভ্যালীর শ্রমিকরা।

তারা বিক্ষোভ মিছিল থেকে আজ সাপ্তাহিত ছুটি রবিবার ও ১৫ আগস্টের ছুটি ভিতরের মধ্যে মালিক পক্ষ তাদের দাবী না মানলে এরপর থেকে লাগাতা অনিদিষ্টকালের জন্য পূর্ণ দিবস ধর্শঘট শুরু হবে জানান।

এদিকে মালিক পক্ষে সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিসিএস) বলেছে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলমান রেখে প্রচলিত শ্রম আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ব্যাথিত তাদের এধরণের কর্মবিরতি ও ধর্মঘট পালন করা শ্রম আইন পরিপস্থি বলে জানিয়েছে। চলমান এ শিল্প বিরোধ আইন সম্মত ভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী পারষ্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। 

বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান নোমান হায়দার চৌধূরী বলেছেন, চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে এধরণের আন্দোলন করতে পারেনা। তারা দেশীর আইন অমান্য করে চা শিল্পের ক্ষতি করছেন বলে জানান।

তিনি আরো জানান, এবার বিশেষ কারণে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে দ্বিবাষিক চুক্তি করতে বিলম্ব হচ্ছে। তারা চা শ্রমিকদেরদাবীর প্রতি সুহানুবতিশীল। চা শ্রমিকরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা মিলিয়ে এখনো ৫শত টাকার উপরে মজুরী পান। এখন তাদের দাবী অনুযায়ী ৩শত টাকা মজুরী অকল্পনীয় এবং কোন অবস্থায় সম্ভব হবে না। তবে তাদের দাবী আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান করা হবে।

এদিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনাজী জানান, চা শ্রমিকদের মজুরী বাড়ানো হউক, এব্যাপারে তিনি একমত। তবে নিজদের স্বার্থে এবং মেয়াদ উত্তীন কমিটি নির্বাচনের পার পাওয়ার জন্য চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে এ ধরণের আন্দোলনের সাথে তিনি একমত নয়। এছাড়াও তিনি আরো বলেন, মালিক পক্ষের সাথে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আলোচনা চলমান অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় এ আন্দোলন অন্যায় এবং অবৈধ বলে তিনি জানান।

সরেজমিন দেওরাছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই চা শ্রমিক নারী পুরুষরা বাগানের কারখানার সম্মুখে অবস্থান নেয়। এসময় তারা চা পাতা আহরনের ঝুলা রেখে কারখানার সম্মুখে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। শ্রমিকদের এই কর্মবিরতিতে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মসূচীতে যোগ দেন বাগান পঞ্চায়েত কমিটির লোকজন। 

চা শ্রমিক নারী অতিকা মুন্ডা ও নিয়তি বৈদ্য জানান, বতর্মানে আমরা দিন হাজিরা মাত্র ১২০ টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে আলু কিনলে চাল কিনতে পারিনা। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ঔষধ পথ্য কিনবো কি দিয়ে। এছাড়া সারা মাসে এক টুকরো ভালো মাছ খাওয়াতে পারিনা। 

তারা জানান, বাগান কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দেয়। আমরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে চা পাতা তুলি। এই চা পাতার টাকায় বাগানের মালিক ও বাবুরা মাংস খায় কিন্তু আমাদের দিকে তাঁদের কোন নজর নাই। তাই আমরা দাবি আদায়ে কর্মবিরতি পালন করছি। 

দেওরাছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সুবোধ কুর্মি জানান, গত চারদিন ধরে আমরা প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করছি। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেনা। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। আমরা যে মজুরী পাই তা দিয়ে একজনের দিনের খাবার জুটেনা। কিন্তু এক পরিবারে কমপক্ষে তিনজন রয়েছে। তাই আমরা আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ন কর্মবিরতি পালন করছি। আমাদের দাবি মানা নাহলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচী দেবো বলে তিনি জানান।

এদিকে শুধুমাত্র দেওরাছড়া নয়। একই দাবিতে জেলার ৯৩টি চা বাগানে পূর্ন কর্মবিরতি পালনের খবর পাওয়া গেছে।