পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শাম্মী আক্তার (৩৯) নামে এক বিউটিশিয়ান নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শাম্মীর ছেলে সাইম আলমের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১০ আগস্ট) দিন ব্যাপি স্থানীয় কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করে। এ কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের কয়েকশত ছাত্র অংশ নেয়।
অন্যদিকে শাম্মী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জেন্নাত আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান তদন্তকারী কর্মকর্তা জেন্নাত আলীর প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শাম্মী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জেন্নাত আলীকে প্রত্যাহার করে পিরোজপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রত্যাহার করার কোন কারন উল্লেখ করেননি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান।
গত সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শাম্মী আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাইম আলম (১৭) বাদী হয়ে মামি ও সৎ বাবাকে আসামি করে সোমবার (৮ আগস্ট) রাতে মঠবাড়িয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর নিহত শাম্মীর ভাইয়ের স্ত্রী আয়শা খানম রােজি ও শাম্মী আক্তারের বর্তমান স্বামী সিরাজুল সালেকিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শাম্মীর ছেলে সাইম আলমের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, দশম শ্রেণির ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিল বের করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করে। শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীর মায়ের হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আয়শা খানমকে বিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের দাবি জানান।
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষিকা আয়শা খানমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভা ডাকা হয়েছে। সেই সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুলিশ ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, শাম্মী আক্তার কে এম লতীফ সুপার মার্কেটে ১০ বছর ধরে পার্লারের ব্যবসা করে আসছিলেন। তার পার্লারের নাম 'শাম্মী বিউটি পার্লার'। প্রথম স্বামী ফিরাজ আলমের সঙ্গে প্রায় ১৩ বছর আগে বিচ্ছেদ হওয়ার পর সেই সংসারের দুই সন্তান নিয়ে মঠবাড়িয়া পৌর শহরের থানা পাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি।
এজাহারে বলা হয়, দুই বছর আগে বিয়ে হওয়া দ্বিতীয় স্বামী সালেকিন ঢাকায় ব্যবসা করেন। গত রোববার (৭ আগস্ট) বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে বাসায় আসেন তিনি। এদিন আয়শা খানমও ওই বাসায় আসেন। রাতে শাম্মী আক্তার স্বামী সালেকিনকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরেন। আর তার ভাবি আয়েশা খানম মাঝ ঘরে ঘুমান। কিন্তু শাম্মী আক্তার গভীর রাতে তার স্বামী ও আয়েশাকে বিছানায় আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ঝগড়ায় জড়িয়ে পরেন। ঝগড়ার একপর্যায়ে স্বামী সালেকিন আয়শা খানমের সহযোগিতায় মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে শাম্মীকে হত্যা করেন।
শাম্মীর ছেলে সাইম আলম বলেন, হত্যার দায় এড়াতে পরের দিন সকালে সালেকিন ও আয়শা মিলে তার মায়ের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তারা হত্যার ঘটনাকে হার্ট অ্যাটাক বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আমরা আমার মায়ের হত্যাকারীদের শাস্তি চাই।
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. নূরুল ইসলাম বাদল বলেন, ঘটনার পরই সালেকিন ও আয়শা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে হত্যা মামলায় তাদের দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ওই দিন রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদিক আহমেদের কাছে আসামি শেখ সিরাজুল সালেকিন ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আগামী ১৬ আগস্ট আসামিদের রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে। তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যাহারের বিষয়ে ওসি মো. নূরুল ইসলাম বলেন, জেন্নাত আলীকে প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনি জানেন। তবে জেন্নাতকে এ মামলার কারনে প্রত্যাহার করা হয়নি। তাকে অন্য কারনে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।